গত ৮ মাস ধরে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিতে কাজ করছে মজুরি বোর্ড। এরই মধ্যে ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাবও করেছে শ্রমিক-মালিক, দুই পক্ষই। তবে, মালিক পক্ষের প্রস্তাবকে কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য বলছেন না শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা- বিলস।
আর গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস বলছে, সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার টাকা করা হলেও মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় প্রকৃত অর্থে এক টাকাও বাড়বে না শ্রমিকদের বেতন। জীবন যেখানে যেমন। রাজধানীর বাসিন্দা এখানকার ৫ পরিবারের সদস্য। যাদের জন্য রান্না হয় একটি চুলায়, যারা দরকারি নানা কাজ সারেন একটি গোসলখানায়। এই মানুষগুলোর প্রতিদিনের শুরু একইভাবে, জীবিকার তাগিদে দিন কাটে ঘড়ি ধরে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
দৈনন্দিন আয়-ব্যয়ের হিসাবে কতটুকু সচ্ছল তারা? যখন উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি পাওয়া এই দেশে মাথাপিছু আয় ১৭শ’ ১০ ডলার অর্থাৎ বাৎসরিক গড় আয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘নয় বছর হলো চাকরি করি। বেতন মাসে ৭ হাজার টাকা। ওভারটাইম মাসে ৫০ থেকে ৬০ ঘণ্টা হয়। আরও এক শ্রমিক বলেন, আমরা ৮ জন মানুষ সংসারে। আমার বড় ছেলে আর আমি চাকরি করি। বেতন না বাড়ালে চলবে কি করে।’
বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে সুশৃঙ্খল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত তারা। তাদের হাতেই ঘুরে রফতানির চাকা। পোশাক শিল্পের এই কারিগরদের মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যেখানে স্বতঃস্ফূর্ত মালিকপক্ষও। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘সবকিছু হিসাব করলে দেখা যায় ২৬ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পায়। সেখানে আমরা ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।’
তবে, মালিকপক্ষের এই প্রস্তাবকে গ্রহণযোগ্য বলছে না বিলস। তাদের যুক্তি, সর্বশেষ ২০১৩ সালে মজুরি নির্ধারণকালে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির যে বিধান রাখা হয়, তাতে ৫ বছরের ব্যবধানে সর্বনিম্ন বেতন ৫ হাজার ৩৬০ টাকা এমনিতেই দাঁড়িয়েছে ৬,৪৬০ টাকায়, যা মালিকপক্ষের প্রস্তাবিত বেতনের চেয়ে ১শ’ টাকা বেশি। বিলসের দাবি, প্রতি গ্রেডেই কম বেতন প্রস্তাব করেছে বিজিএমইএ। বিলসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এখন যা মজুরি হয়েছে তার থেকে কেন কম দেয়া হবে। মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে বেতন পুনঃনির্ধারণের জন্য। আমি সবকিছু বিবেচনা করে বলতে পারি এই প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে না।’
শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন দাবি, ১২ হাজার টাকা। গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, এক্ষেত্রে অনেকটা উদারতার পরিচয় দিয়েছে শ্রমিকপক্ষ। সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘দেখা গেছে শ্রমিকদের মাসিক ব্যয় এর থেকেও বেশি।’
উর্ধমুখী ব্যয়ের বাজারে জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা হবে, সেই পরামর্শ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা- বিআইডিএসের। বিআইডিএসর গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আমরা গবেষণা করে দেখেছি ৮ হাজার টাকা বেতন কোন বৃদ্ধি নয়। মজুরি বৃদ্ধি হতে হবে সত্যিকার অর্থে।
৪৪ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত যে খাতে, এবার সেই খাতের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের মধ্য দিয়ে সস্তা শ্রমের তকমা থেকে বেড়িয়ে আসবে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প; সেই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার।