Home Bangla Recent ১৫ অক্টোবর দায়িত্ব হস্তান্তর শুরু করবে অ্যাকর্ড

১৫ অক্টোবর দায়িত্ব হস্তান্তর শুরু করবে অ্যাকর্ড

আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে পোশাক কারখানা তদারকির দায়িত্ব সরকারের কাছে হস্তান্তর শুরু করবে ইউরোপীয় ক্রেতা ও শ্রম অধিকার সংস্থার জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড)। গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

অ্যাকর্ডের পূর্বঘোষিত মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জুনে। কিন্তু কারখানার সংস্কারকাজে অনগ্রসরতা ও শ্রম নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ঘোষণা করে অ্যাকর্ড। অন্যদিকে কারখানার মূল্যায়ন কার্যক্রম ও সংস্কারের বিষয় নিয়ে বিক্ষুব্ধ কারখানাগুলোর কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩০ নভেম্বরের পর কার্যক্রম বৃদ্ধির আর সুযোগ নেই অ্যাকর্ডের। এ পর্যায়ে কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা সরে এসেছে জোটটি। সম্প্রতি সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি প্রস্থান পরিকল্পনাও জমা দিয়েছে তারা। এ প্রস্থান পলিসি ও অ্যাকর্ডের কার্যক্রম হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি তদারকি করছে জাতীয় ট্রানজিশন মনিটরিং কমিটির (টিএমসি) সদস্যরা। গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের টিএমসি সদস্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে অ্যাকর্ডে স্বাক্ষরকারী কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে না এবং শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন করেছে— এমন কারখানাগুলোর দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। এমন কারখানার সংখ্যা ২৫টি। প্রক্রিয়াটি শুরু হবে ১৫ অক্টোবর।

বাকি কারখানাগুলোর দায়িত্ব হস্তান্তরে কতদিন সময় লাগবে এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এসব কারখানার তদারকি করবে, তা খতিয়ে দেখছে অ্যাকর্ড। এ লক্ষ্যে সাত সদস্যের একটি কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে। টিমটি দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় লিয়াজোঁ বা সমন্বয়কারী মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।

সরকার ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অ্যাকর্ডের সব কারখানার দায়িত্ব বুঝে নিতে চাইছে। কিন্তু অ্যাকর্ড মনে করছে, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এ দায়িত্ব বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। যদি কোনো কারণে এ সময়ের মধ্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব কার্যক্রমটি শেষ করা হবে। কেননা এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে।

শুক্রবার অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় গতকালের বৈঠকের ফলাফলগুলো তুলে ধরা হবে। এরপর বাকি ফাইলগুলো হস্তান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। কবে নাগাদ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে, তাও উল্লেখ করবে অ্যাকর্ড। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত পরিকল্পনা সরকারকে জানানো হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত একজন বণিক বার্তাকে বলেন, ১৫ অক্টোবর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) কাছে কারখানা তদারকির দায়িত্ব হস্তান্তর শুরু করবে অ্যাকর্ড। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যক্রম সমাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু করবে অ্যাকর্ড। কোনোভাবেই ৩০ নভেম্বরের পর অ্যাকর্ড সময় পাবে না। যদিও তারা দেড় বছরের বর্ধিত সময় আশা করেছিল। সার্বিকভাবে অ্যাকর্ড সম্মানজনকভাবে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের সমাপ্তি টানতে চাইছে।

সভায় উপস্থিত আরেকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাত সদস্যের কারিগরি টিমে ডিআইএফই ও রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের (আরসিসি) দুজন, অ্যাকর্ডের দুজন এবং আইএলও, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর একজন করে থাকবেন। প্রথম ধাপে নন-ব্র্যান্ড কারখানাগুলো হস্তান্তর হবে। অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সভার পর পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্নের লে-আউট দেয়া হবে সরকারের কাছে। অ্যাকর্ডের কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

দেশের পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও শ্রম নিরাপত্তা নিয়ে জাতীয় পরিদর্শন ব্যবস্থার চরম দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একাধিক জোট। এরই একটি হলো ইউরোপভিত্তিক অ্যাকর্ড। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকার ও খাতসংশ্লিষ্টরা অ্যাকর্ডের কার্যক্রম মেনে নিতে বাধ্য হন।

সূত্রমতে, অ্যাকর্ডের প্রস্থান পরিকল্পনাটি মোট ছয় ধাপের। এর প্রথম ধাপে রয়েছে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে জোটের অর্জিত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে মূল্যায়ন কর্মসূচির দলিল বা দাপ্তরিক কাগজপত্র হস্তান্তর। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব ধাপ পেরিয়ে সর্বশেষ ধাপে সম্পূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাইছে জোটটি।

ছয় ধাপের প্রস্থান পরিকল্পনায় সরকার গঠিত আরসিসির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজের সুযোগ চেয়েছে অ্যাকর্ড। সব ধাপ সম্পন্নের প্রক্রিয়ায় আরসিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টিও পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে জোটটি। প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, আরসিসি কার্যক্রমের আওতায় একটি লিয়াজোঁ সেল গঠনের। এছাড়া সেলটির সঙ্গে সমন্বিতভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করা কারখানাগুলোর সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে অ্যাকর্ড।

জোটের আওতাভুক্ত যেসব কারখানা এখন আর অ্যাকর্ডে স্বাক্ষরকারী ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করছে না, পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে সেগুলোর বিস্তারিত হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা কমিটি-বিষয়ক কর্মসূচি ও অভিযোগ গ্রহণ পদ্ধতি হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে। এর পরবর্তী অর্থাৎ সর্বশেষ দুই ধাপে আরসিসির সক্ষমতা অর্জন সাপেক্ষে সব কারখানার দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here