বিগত বছরগুলোর তুলনায় দিন দিন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আগামীতে এই বাজার আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করছেন দেশীয় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রপ্তানিতে একধাপে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ওভেন ও নিট মিলে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৯৬২ কেটি ৯০ লাখ ডলারের। আর আগের অর্থবছর রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৭৭৫ কোটি ডলারের। এক বছরেরই রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. নাছির আমাদের সময়কে জানান, রানা প্লাজা ধস, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকা-ের পর বাংলাদেশের পোশাকের বাজার কালো মেঘ গ্রাস করে ফেলে। আমাদের নানাভাবে সুনাম ক্ষুণœ করা হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পোশাক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন ক্রেতারা। রানা প্লাজা ও তাজরীনের রেশ ধরে ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অনেক কারখানা বন্ধ করে দেয়। পোশাকশিল্প মালিকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। তার পরও অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণ করে সব কারখানা কমপ্লায়েন্স করে। এসব ঝড়ের মধ্যেও সরকারের সদিচ্ছা ও উদ্যোক্তাদের ব্যাপক পরিশ্রমের ফলে ইরোপের বাজার ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি আমরা। আশা করা যায়, আগামীতে এ বাজার আরও বিস্তৃত হবে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) এ দেশগুলোয় ২০০১ সাল থেকে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। আর ২০১১ সালে এসে এ সুবিধার শর্ত আরও শিথিল হয়। বাড়তি এ সুবিধার কারণে নিজস্ব কাঁচামাল না থাকার পরও সেখানে রপ্তানি বাড়ছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। আর তৈরি পোশাকের ৬০ শতাংশ যায় ইউরোপের বাজারে।
আলোচ্য সময়ে নিটওয়্যর রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৯৮৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের।
এদিকে ২০১৭-১৮ অর্খবছরে ওভেন রপ্তানি হয়েছে ৮৬১ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের। এর আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৭৮৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে জার্মানিতে। এখানে রপ্তানি হয়েছে ৫৫৭ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের। এ বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউকে। এখানে রপ্তানি হয়েছে ৩৭২ কোটি ৪২ লাখ ডলারের। এ বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
অবশ্য বেশকিছু দেশে রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, হাঙ্গেরি, এস্তোনিয়া, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়া।