Home Bangla Recent কার্যক্রম গোটানোর পরিকল্পনা সরকারকে দিয়েছে অ্যাকর্ড

কার্যক্রম গোটানোর পরিকল্পনা সরকারকে দিয়েছে অ্যাকর্ড

পোশাক খাতের কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও শ্রমনিরাপত্তা মূল্যায়নে ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা ও শ্রম অধিকার সংস্থার জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশের কার্যক্রম শুরু হয় পাঁচ বছর আগে। এ কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার এক পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে অ্যাকর্ড নামে পরিচিত জোটটি, যা এরই মধ্যে সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ এ কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া হবে, প্রস্থান পরিকল্পনায় এ নিয়ে কোনো ধরনের সময়সীমা উল্লেখ করেনি জোটটি।

দেশের পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও শ্রমনিরাপত্তা নিয়ে জাতীয় পরিদর্শন ব্যবস্থার চরম দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি পোশাকের ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একাধিক জোট। এর একটি, ইউরোপভিত্তিক অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড)। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকার ও খাতসংশ্লিষ্টরা অ্যাকর্ডের কার্যক্রম মেনে নিতে বাধ্য হয়।

অ্যাকর্ডের পূর্বঘোষিত মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জুনে। কিন্তু কারখানার সংস্কারকাজে অনগ্রসরতা ও শ্রমনিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ঘোষণা করে অ্যাকর্ড। অন্যদিকে কারখানার মূল্যায়ন কার্যক্রম ও সংস্কারের বিষয় নিয়ে বিক্ষুব্ধ কারখানাগুলোর কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩০ নভেম্বরের পর কার্যক্রম বৃদ্ধির আর সুযোগ নেই অ্যাকর্ডের। এ পর্যায়ে কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা সরে এসেছে জোটটি। সম্প্রতি সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি প্রস্থান পরিকল্পনাও জমা দিয়েছে জোটটি।

সূত্রমতে, অ্যাকর্ডের প্রস্থান পরিকল্পনাটি মোট ছয় ধাপের। এর প্রথম ধাপে রয়েছে— বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে জোটের অর্জিত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভাগাভাগি করা। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে— মূল্যায়ন কর্মসূচির দলিল বা দাপ্তরিক কাগজপত্র হস্তান্তর। এভাবে পর্যায়ক্রমে সবগুলো ধাপ পেরিয়ে সর্বশেষ ধাপে সম্পূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাইছে জোটটি।

সরকারি সংস্থার সক্ষমতার ঘাটতির কারণে কারখানার স্থাপত্য, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে গঠিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও শ্রম অধিকার সংস্থাগুলোর জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। জাতীয়ভাবেও কারখানা পরিদর্শনের জন্য প্রকল্প আকারে নেয়া হয় একই ধরনের উদ্যোগ। সে প্রকল্পের আওতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) তদারকিতে গঠন করা হয় রিমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি)। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের অনুপস্থিতিতে আরসিসিরই এ-সংক্রান্ত সব দায়িত্ব বুঝে নেয়ার কথা রয়েছে।

ছয় ধাপের প্রস্থান পরিকল্পনায় সরকার গঠিত আরসিসির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজের সুযোগ চেয়েছে অ্যাকর্ড। সবগুলো ধাপ সম্পন্নের প্রক্রিয়ায় আরসিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টিও পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে জোটটি। প্রস্তাব দেয়া হয়েছে আরসিসি কার্যক্রমের আওতায় একটি লিয়াজোঁ সেল গঠনের। এছাড়া সেলটির সঙ্গে সমন্বিতভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করা কারখানাগুলোর সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে অ্যাকর্ড।

জোটের আওতাভুক্ত যেসব কারখানা এখন আর অ্যাকর্ডে স্বাক্ষরকারী ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করছে না, পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে সেগুলোর বিস্তারিত হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা কমিটি-বিষয়ক কর্মসূচি ও অভিযোগ গ্রহণ পদ্ধতি হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে। এর পরবর্তী অর্থাৎ সর্বশেষ দুই ধাপে আরসিসির সক্ষমতা অর্জনসাপেক্ষে সব কারখানার দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে খাতসংশ্লিষ্ট ও ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এক্সিট পলিসিতে ছয় ধাপে কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা দিয়েছে অ্যাকর্ড। এর মধ্যে প্রথম ধাপে রয়েছে নলেজ শেয়ারিং ও প্রশিক্ষণ। দ্বিতীয় ধাপে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র হস্তান্তর আর সর্বশেষে রয়েছে দায়িত্ব হস্তান্তর। এ পরিকল্পনা নিয়ে কী করা হবে বা এ পরিকল্পনার পর পরবর্তী ধাপটি কী হবে, তা ৯ অক্টোবর টিএমসির সভায় নির্ধারণ হবে। আমরা সেখানে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করব। দুই পক্ষের পরিকল্পনার সমন্বয়েই কিছু করা হবে। আমরা অবশ্যই সময় বেঁধে দেব। তারা ছয় ধাপ কবে সম্পন্ন করবে, তার কোনো সময় উল্লেখ তারা করেনি। কিন্তু আমরা সময় বেঁধে দেব। যা-ই হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হতে হবে। ওই সময়ের পর আর কোনো উপায় নেই।

২০১৩ সালে কর্মসূচি ঘোষণার পর এক ধরনের আতঙ্ক থেকেই অ্যাকর্ডের সমালোচনায় মুখর ছিলেন পোশাক শিল্প মালিকরা। পরে সমালোচকদের তালিকায় যোগ দেন সরকার-সংশ্লিষ্টরাও। কিন্তু কারখানায় প্রাণহানির ভয়াবহতার প্রেক্ষাপটে নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগোতে থাকে অ্যাকর্ড। চলতি বছরের জুনে অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। এরই মধ্যে কর্মসূচি সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছিল জোটটি।

বাংলাদেশ ত্যাগের আগেই আরসিসির সক্ষতার উন্নয়ন চেয়েছিল অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। কিন্তু আদালতের বিধিনিষেধের কারণে এখন আরসিসির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে সম্মানজনক প্রস্থান আশা করছে জোট দুটি। কারণ আবেদন করেও এখন বাংলাদেশে স্থাপিত দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সম্প্রসারণের অনুমতি পাচ্ছে না এ দুই জোট। এর আগে বিজনেস লাইসেন্স নবায়নের জন্য বিজিএমইএ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তাও চেয়েছিল অ্যাকর্ড।

অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাংলাদেশ কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার বিষয়টি তদারকি করছেন জাতীয় ট্রানজিশন মনিটরিং কমিটির সদস্যরা। এ কমিটির সদস্য ও ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) মহাসচিব মো. তৌহিদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যাকর্ডের পরিকল্পনাটির বিষয়ে জানলেও এর বিস্তারিত জানতে পারিনি। টিএমসির আগামী সভায় ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। তবে চরম বাস্তবতা হলো, সক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশের জাতীয় কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা এখনো দুর্বল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here