আগামী ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাট থেকে সোনালি ব্যাগ উৎপাদন হবে। এরই ধারাবাহিকতায় কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটজাত পণ্য রফতানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জনের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। গতকাল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাট থেকে সোনালি ব্যাগের বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য একটি ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য গতকাল যুক্তরাজ্যের ফুটামুরা কেমিক্যাল লিমিটেড ও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট (এনডিএ) স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বিজেএমসিকে পাট থেকে সেলুলোজ উৎপাদনের মাধ্যমে সোনালি ব্যাগ প্রস্তুতকরণে কারিগরি সহায়তা দেবে ফুটামুরা কেমিক্যাল। এ সহযোগিতার ফলে শিগগিরই সোনালি ব্যাগ বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
বিজেএমসির পক্ষে সংস্থাটির সচিব একেএম তারেক (উপসচিব) ও ফুটামুরা কেমিক্যালের পক্ষে কোম্পানিটির জেনারেল ম্যানেজার গ্রিমি কোউলহার্ড সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান, বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহম্মেদ খান, ফুটামুরা কেমিক্যালের গ্রুপ ম্যানেজার মার্টিন রিচার্ড কক রফি, অপারেশন ম্যানেজার জেমস ডাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সোনালি আঁশের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত করে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করার মাধ্যমে পাটচাষীদের স্বপ্নপূরণে জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পাটকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) ২৩৫ প্রকার পাটপণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চ মূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারকোল, ভিসকোস, পাটপাতার পানীয়সহ নতুন নতুন পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত পচনশীল সোনালি ব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সূক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এ ব্যাগ দামেও সাশ্রয়ী হবে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়ালে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন।
উল্লেখ্য, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সোনালি ব্যাগ তৈরি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় গত বছরের ১২ মে। বিজেএমসির তত্ত্বাবধানে এ ব্যাগ উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগ পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে সোনালি ব্যাগ তৈরির একটি ম্যানুয়েল পাইলট প্লান্ট স্থাপন করা হয়।
তবে বৃহৎ পরিসরে সোনালি ব্যাগ তৈরির উৎপাদনের জন্য দেশে বা বিদেশে কোনো মেশিন তৈরি হয়নি। এ ধরনের মেশিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হয়। প্রাথমিকভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে মেশিন তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার পলিব্যাগ উৎপাদন করা গেছে। প্রকল্পটি সফলভাবে পরিচালিত হওয়ায় দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে সোনালি ব্যাগের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।