Home Bangla Recent পোশাক খাতের মতো সুবিধা পাবে পশ্চাৎমুখী চামড়া শিল্পও

পোশাক খাতের মতো সুবিধা পাবে পশ্চাৎমুখী চামড়া শিল্পও

শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের জন্য সব ধরনের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে যুক্তিসঙ্গতভাবে শুল্ক সুবিধা প্রদান করা হবে

পশ্চাৎমুখী চামড়া শিল্পকে এগিয়ে নিতে রপ্তানি সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। এজন্য আগামী তিন বছরের জন্য এ শিল্পে পোশাক খাতের মতো সুবিধা দেয়া হবে। এরমধ্যে ইডিএফের আকার, বিদ্যমান বন্ড ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ‘ইন্টার বন্ড ট্রান্সফার ফ্যাসিলিটিজ, অগ্নি ও বিল্ডিং সেফটি এবং কমপ্লায়েন্ট সংশ্লিষ্ট ইকুইপমেন্টের আওতায় পোশাক খাত যে সুবিধা পায় তা চামড়া শিল্পও পাবে। এছাড়া চামড়া শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্যকরণ এবং উল্লেখযোগ্যভাবে লিড টাইম কমানোর লক্ষ্যে ‘সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউজ’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে। এতে চামড়া শিল্পের পরিবেশ ও রপ্তানি বাড়বে বলেই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

নতুন রপ্তানিনীতি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের পর ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র অনুসারে নতুন রপ্তানি নীতিতে বড় যে সুবিধাগুলো থাকবে তার মধ্যে রপ্তানি পণ্যে ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কমানো অন্যতম। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি সম্প্রসারণ, রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে সহজ শর্তে ঋণ, প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান।

জানা গেছে, ২০১৫-১৮ মেয়াদের রপ্তানি নীতির মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০ জুন। সেই হিসাবে নতুনটির যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে। কিন্তু নতুন রপ্তানি নীতি না আসায় আগের নীতিতেই চলছে এখনও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে রপ্তানি নীতি ২০১৮-২১ প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত আগের নীতি কার্যকর থাকবে।

নতুন রপ্তানি নীতির বিষয়ে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, বর্তমান সরকারের সহায়ক বাণিজ্য নীতি এবং সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিকারক দেশে নির্বাচন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন, ব্রেক্সিট এবং কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন ‘রপ্তানি নীতি’ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির এ ধারা আরও ত্বরান্বিত করবে।

নতুন রপ্তানি নীতিতে যা থাকছে : নতুন নীতিতে রপ্তানি পণ্যে উৎসাহব্যঞ্জক সুবিধা প্রদানের জন্য মূল্য সংযোজন হার কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। অর্থাৎ এর আগে কোন ব্যবসায়ীর কাঁচামাল আমদানিতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হত, আমদানি কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানি করে যে আয় হবে তা আমদানি ব্যয়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি হলেই চলবে। এর আগে এর পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশ।

নতুন নীতিতে অধিক মূল্য সংযোজিত তৈরি পোশাক ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজের সঙ্গে ‘ডেনিম’, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই), বিকারক (রিয়েজেন্ট)সহ জুতাকে (চামড়াজাত, অচামড়াজাত ও সিনথেটিক) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য (মোটরসাইকেল, ব্যাটারি), ফটোভোল্টিক মডিউল, কাজুবাদাম (কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাতকৃত), প্রক্রিয়াজাতকৃত কাঁকড়া ও খেলনাকে বিশেষ উন্নয়নমূলক খাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

খাতভিত্তিক সুবিধার বিষয়ে নতুন রপ্তানি নীতিতে তৈরি পোশাক খাতের জন্য বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ শান্তির চরে গড়ে ওঠা ‘নিট পল্লী’সহ সব বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে গড়ে ওঠা ‘পোশাক পল্লী’র অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ইউটিলিটি সুবিধাসহ বর্জ্য বা দূষিত পানি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

তুলা আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে দেশে তুলার উৎপাদন বাড়াতে এবং তুলার বিকল্প পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

চামড়া খাত : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হিসেবে চামড়া খাতের অনুকূলে প্রদত্ত সুবিধাসমূহ (যথা- ইডিএফের আকার, বিদ্যমান বন্ড ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ‘ইন্টার বন্ড ট্রান্সফার ফ্যাসিলিটিজ, অগ্নি ও বিল্ডিং সেফটি এবং কমপ্লায়েন্ট সংশ্লিষ্ট ইকুইপমেন্ট) তৈরি পোশাক শিল্পের মতো সুবিধা পাবে। চামড়া শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্যকরণ এবং উল্লেখযোগ্যভাবে লিড টাইম কমানোর লক্ষ্যে ‘সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউজ’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

কমপ্লায়েন্ট পাদুকা ও চামড়াজাত শিল্প খাত সংশ্লিষ্ট কারখানাসমূহকে সবুজ রঙ শ্রেণীভুক্তকরণে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। রপ্তানি আয়ে অবদান রাখা ট্যানারিমালিক ও ট্যানারিবিহীন রপ্তানিকারকদের অপরিহার্য কেমিক্যালসমূহ আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তিসংগতভাবে শুল্ক সুবিধা দেয়া হবে।

এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে বর্জ্য পরিশোধনাগারের (ইটিপি) মাধ্যমে তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিবেশবান্ধন উপায়ে আমদানিকৃত চামড়া প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতি অনুযায়ী পুনঃরপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে।

প্লাস্টিক খাত : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে ইন্টার বন্ড ট্রান্সফার ফ্যাসিলিটিজ প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

প্লাস্টিক খাতের প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক ও সাধারণ রপ্তানিকারক- উভয়ের জন্য ইডিএফ (রপ্তানি উন্নয়ন) তহবিলে অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় মোল্ড স্থাপনে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্যের পরিচিতি এবং রপ্তানি উন্নয়নের নিমিত্তে অধিকহারে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

প্লাস্টিক পণ্য ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ পণ্যের মান পরীক্ষা ও সনদ প্রদানের জন্য অ্যাক্রিডেটেড ল্যাবরেটরি (অনুমোদিত পরীক্ষাগার) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বিএসটিআইয়ে সব পণ্যের মান পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। প্লাস্টিকশিল্প খাতকে গ্রিন শ্রেণীভুক্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

প্লাস্টিক পণ্যের জন্য গঠিত বিজনেস কাউন্সিলকে পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হিমায়িত মৎস্য ও মৎস্য : শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের জন্য সব ধরনের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে যুক্তিসঙ্গতভাবে শুল্ক সুবিধা প্রদান করা হবে। ত্রুটিযুক্ত বা অন্য কোন কারণে রপ্তানিকৃত হিমায়িত চিংড়ি ও মাছের কন্টেইনার বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসলে তা বিদ্যমান কাস্টমস্ অ্যাক্ট, ১৯৬৯-এর ২২ (গ) ধারা অনুযায়ী শুল্ক বিভাগ কর্তৃক ছাড়করণে সুযোগ প্রদান এবং ২০০৭ সালের বিশেষ আদেশ পরিহার করে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করা হবে।

ওষুধ শিল্পের জন্য প্রণীত ‘জাতীয় এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট) ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদন ও রপ্তানি সংক্রান্ত নীতি’ বাস্তবায়নে কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আইসিটি সেক্টরে কর্মরত মিড-লেভেল ম্যানেজমেন্টকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া সার্বিক রপ্তানিতে উৎসাহ প্রদানের জন্য ঢাকা শহরের বাইরে উপযুক্ত কোন জায়গায় একটি আধুনিক অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি সম্প্রসারণ, কন্টেইনার টার্মিনালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনপূর্বক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। অ্যান্টি-ডাম্পিং ইস্যুতে কস্ট অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা হবে।

মনোনীত ব্যাংকের মাধ্যমে এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নবায়নের বিষয়টি পরীক্ষা করা হবে। রপ্তানি শিল্পের ফেব্রিকস, স্যাম্পল, কাঁচামাল দ্রুত আমদানি বা প্রেরণের জন্য পোর্টে বা বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা পৃথক উইন্ডো স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া ব্লু ইকোনমি সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মেরিন রিসোর্স হতে প্রাপ্ত সম্পদ বা পণ্য রপ্তানিতে নীতি সহায়তা প্রদান করা হবে। সরকারের বাস্তবায়নাধীন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি বরাদ্দসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কমপ্লায়েন্স প্রতিপালনে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য সুপারিশ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here