মজুরি বোর্ড গঠনের আট মাস পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে সরকার। কথা ছিল, অন্য গ্রেডগুলো সমন্বয় করে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে মজুরি কাঠামোর চূড়ান্ত সুপারিশ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে মজুরি বোর্ড। কিন্তু একজন বোর্ড সদস্যের অনুপস্থিতির কারণে এ সময়সীমার মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মজুরি বোর্ডের সদস্য ছয়জন। এর মধ্যে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের একজন করে স্থায়ী প্রতিনিধি থাকেন। বোর্ডের স্থায়ী শ্রমিক প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতে অন্যান্য গ্রেডের মজুরি হার নির্ধারণ প্রক্রিয়াও শ্লথ হয়ে পড়েছে। ২ অক্টোবর স্থায়ী এ শ্রমিক প্রতিনিধির ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফেরার পর মজুরি বোর্ডে সব সদস্য একসঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তারপর নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করে সব গ্রেডের মজুরি নির্ধারণ করবেন। প্রক্রিয়াটি ১৭ অক্টোবরের মধ্যে শেষ না হলে সরকারের কাছে আবেদন করে মজুরি বোর্ডের সময়সীমা বৃদ্ধি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, শুধু সর্বনিম্ন গ্রেডের মজুরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যান্য গ্রেডের মজুরি হার নির্ধারণের কাজ চলছে। এটি কবে নাগাদ চূড়ান্ত হচ্ছে বলা যাবে না, তবে শিগগিরই হয়ে যাবে। তারপর মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর প্রজ্ঞাপন হবে, এরপর ১৪ দিন সময় থাকবে সেই প্রজ্ঞাপনের ওপর মতামত নেয়ার জন্য। এ সময়ের মধ্যে কারো আপত্তি থাকলে সেই আপত্তি জানানো যাবে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব করার জন্য। সময় শেষ হয়ে গেলেও বৃদ্ধির বিধান আছে।
পোশাক খাতের নতুন মজুরি হার নির্ধারণে চলতি বছরের জানুয়ারিতে নতুন বোর্ড গঠনের ঘোষণা আসে। আইন অনুযায়ী বোর্ড ঘোষণার ছয় মাসের মধ্যে নতুন মজুরি কাঠামোর চূড়ান্ত সুপারিশ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা মজুরি বোর্ডের। কিন্তু মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সময় না পাওয়ার দরুন এ বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯ মার্চ। প্রথম সভার সাড়ে তিন মাস পর ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সভা। ১৬ জুলাই বোর্ডের তৃতীয় সভায় মালিক পক্ষ নতুন কাঠামোয় নিম্নতম মজুরি প্রস্তাব করে ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। আর শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাব ছিল ১২ হাজার ২০ টাকা। চতুর্থ সভায় দুপক্ষের প্রস্তাবনার মধ্যকার দূরত্ব কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি জানানো হয় আবেদন করে মজুরি বোর্ডের মেয়াদ ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর পঞ্চম সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ১৩ সেপ্টেম্বর সর্বনিম্ন গ্রেডে ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কথা ছিল অন্য গ্রেডগুলো সমন্বয় করে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠাবে মজুরি বোর্ড। কিন্তু একজন বোর্ড সদস্যের অনুপস্থিতিতে এ সময়সীমায় চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠানো নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
মজুরি বোর্ডের সাবেক শ্রমিক প্রতিনিধি জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি এ প্রসঙ্গে বলেন, শ্রমিকদের স্থায়ী প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকলেও কাজ চলছে বলে জানি। আশা করছি সময়ক্ষেপণ হবে না। যথাসময়ে সব কাজ সম্পন্ন হবে।
পোশাক খাতের বিদ্যমান মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। আইনে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন কাঠামোর গেজেট করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু চলতি বছর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী অক্টোবরের পর গঠন হবে নির্বাচনকালীন সরকার। আর নির্বাচনকালীন সরকার নীতিগতভাবেই এসব সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
এ বিষয়ে বর্তমান মজুরি বোর্ডের মালিক প্রতিনিধি বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখনো অন্যান্য গ্রেডের মজুরি হার নির্ধারণ হয়নি। তবে দ্রুতই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ১৭ অক্টোবরের মধ্যেই সুপারিশ পাঠানো সম্ভব হবে।