তৈরি পোশাকে ভর করে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রতিবেশী ভারতের বাজারে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪২ শতাংশ। একই সঙ্গে বড় দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতেও বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি এসেছে।
সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তবে এশিয়ার অন্যতম প্রধান দুটি দেশ চীন ও জাপানের বাজারে গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি আয় বাড়ার প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভারত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। শুধু তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ১৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এ আয় ১৬৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এ সময় আয় হয়েছিল পাঁচ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
ইপিবির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ভোজ্য তেলের রপ্তানি আয় বেশ লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভোজ্য তেল থেকে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে এই আয় ছিল মাত্র ৫০ লাখ ডলার।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা বেশ আশার কথা; প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক বাজার হিসেবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আয় লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে, এটি ভবিষ্যৎ রপ্তানির জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি বলেন, টাকার দরপতন এবং তুলার দাম কম হওয়ার ফলে মার্কিন বাজারেও দেশের রপ্তানি আয় বাড়ছে। তবে তিনি খাতসংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের সম্ভাবনাকে বিশ্ববাজারে কাজে লাগান। কেননা চামড়ার বিশ্ববাজার তৈরি পোশাকের চেয়েও বড়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে যথাক্রমে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৪.২৩ এবং ১৪.৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে প্রায় ১০ শতাংশ হারে রপ্তানি আয় বেড়েছে। ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যের বাজারে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ১.১৬ শতাংশ। গত তিন মাসে আয় হয়েছে ১০২ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১০৩ কোটি ডলার।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারে রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারতের বাজারে বিশ্বের বড় ব্র্যান্ড কম্পানিগুলো তাদের বিক্রয় কেন্দ্র করার ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাকের কদর বেড়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের আশা, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের পোশাকের রপ্তানি আয় আরো বাড়বে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চীনের বিকল্প বাজার হিসেবে বাংলাদেশে তাঁদের পোশাক ক্রয়ের আদেশ কিছুটা বাড়িয়েছেন।
একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৬৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়। আর গত অর্থবছরের এ সময়ের আয় ছিল ১৪৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর মধ্যে পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ১৪৮ কোটি ডলার।