বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কারখানা সংস্কারে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় তিন শতাধিক গার্মেন্টস কারখানার রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব কারখানার বন্ড সুবিধা সংক্রান্ত সেবা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি পাঠাচ্ছে। ডিআইএফই সূত্র জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার এ চিঠি পাঠানো হতে পারে। কোনো কারখানা সাব কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে পোশাক তৈরি করে থাকলেও ওই সুবিধাও (বন্ড ট্রান্সফার) বাতিল করার অনুরোধ জানানো হবে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএভুক্ত কারখানা রয়েছে ২১৫টি। এর আগে একই কারণে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকেও আলাদা দুটি চিঠিতে সদস্যভুক্ত কারখানাকে দেওয়া ইউডি (ইউটিলিটি ডিক্লারেশন সংক্রান্ত সেবা প্রদানে নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ জানানো হয়। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কারখানাগুলোর রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করা কার্যত অসম্ভব হবে। অবশ্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এ নিষেধাজ্ঞা এখনো কার্যকর করেনি বলে জানা গেছে।
ডিআইএফই’র মহাপরিদর্শক সামছুজ্জামান ভূঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, কারখানাগুলোকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কারখানার ভবনের কাঠামো, অগ্নি কিংবা বৈদ্যুতিক নিরাপত্তায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। বহুবার তাদের সঙ্গে সভা করেছি। এরপর তাদের সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছে। এখন কারখানার শ্রমিকের নিরাপত্তা তথা দেশের ভাবমূর্তির স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, কারখানাগুলো যাতে বন্ড ট্রান্সফার বা সাব কন্টাক্টভিত্তিতেও কোনো কাজ পরিচালনা না করতে পারে, বন্ড কমিশনারেটকে সে অনুরোধও জানাবো। যেসব কারখানার সংস্কার ২০ শতাংশের নিচে তাদের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি বলেন, কারখানাগুলো সংস্কারে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি করতে পারলে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। এর আগে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কারখানাগুলোর মালিক কিংবা প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত বছরের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অন্তত ৩২টি সভা করা হয়েছে এবং দুই দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশকিছু কারখানার সংস্কারের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় ইউডি ইস্যু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। ওই নিষেধাজ্ঞা তিনমাস পর্যন্ত বলবত্ থাকবে।
যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির ইত্তেফাককে বলেন, হঠাত্ করে বন্ধ করে দিলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা সংস্কার করতে পারবে, তাকে তো মারার মানে হয় না। আর যারা সংস্কার করতে পারবে না, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের ‘এক্সিটের’ (বন্ধ করা) উপায় বের করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বহু শ্রমিক হতাহতের পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানা সংস্কারের জোর দাবি উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরই ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের কাছে রপ্তানি করে— এমন দুই হাজার দুইশ’ কারখানা সংস্কারে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে দুটি জোট গঠিত হয়। ওই জোটের কার্যক্রম এখন শেষ হওয়ার পথে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সভুক্ত কারখানাগুলোর সংস্কারে অগ্রগতি ৯০ শতাংশের উপরে। তবে এ দুটি জোটভুক্ত ক্রেতাদের কাছে পোশাক রপ্তানি হয় না, এমন দেড় হাজার কারখানা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের শুরুতে উদ্যোগ নেয় সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়।