কারখানা সংস্কার কার্যক্রম তদারকিতে সরকার গঠিত সংস্কার সমন্বয় সেলের (আরসিসি) সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই বাংলাদেশে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে চায় ইউরোপের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড। এ লক্ষ্যে চলতি মাস থেকে পুরোপুরি সংস্কার হওয়া কারখানার মধ্যে প্রথম দফায় ২৫টি আরসিসির কাছে হস্তান্তর করতে চায়। এ প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে শতভাগ সংস্কার হওয়া ২৩৫টি কারখানা হস্তান্তর হবে। এসব কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকিতে আরসিসির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এর পর ধাপে ধাপে অ্যাকর্ড কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে চায়। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে ইস্যুটি নিয়ে অ্যাকর্ড ও ব্র্যাণ্ডের প্রতিনিধি, কারখানা মালিক ও সরকার পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, অ্যাকর্ডের এমন প্রস্তাবে রাজি নয় সরকার ও গার্মেন্টস কারখানার মালিকপক্ষ। আগামী মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশে এই জোটের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের রায়ের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে, ওই সময়ের মধ্যেই চলে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। ফলে অ্যাকর্ডের যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে ফের জটিলতা তৈরি হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একজন শ্রমিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা আশু সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এই জটিলতার যৌক্তিক সমাধান না হলে, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অ্যাকর্ডভুক্ত ব্র্যান্ডগুলো নতুন করে চিন্তা করতে পারে। এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে নতুন শর্ত আসতে পারে।
শ্রম সচিব আফরোজা খানের সভাপতিত্বে ওই সভায় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও শ্রমিক নেতা রায় রমেশ চন্দ্র, আমিরুল হক আমিন, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন, বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ ছাড়াও এইচএন্ডএমসহ আরো একাধিক ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বহু শ্রমিক হতাহতের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনের উদ্যোগ নিতে গঠিত হয় অ্যাকর্ড । এতে যুক্ত রয়েছে আড়াই শতাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে পোশাক সরবরাহ করে, এমন দুই হাজার দুইশ কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করে তা সংস্কার কাজ তদারকি করছে অ্যাকর্ড। এর বাইরে অ্যালায়েন্স নামে আমেরিকাভিত্তিক ক্রেতাদের একটি জোটও তাদের ক্রেতাদের কাছে পোশাক সরবরাহকারী কারখানার সংস্কার তদারক করছে। ইতোমধ্যে গত জুনে তাদের পাঁচ বছরের সময়সীমা শেষ করেছে। এর মধ্যে সংস্কারের বাইরেও নানা বিষয়ে কারখানায় নিজেদের ‘খবরদারি’ বাড়ানো নিয়ে কারখানা মালিক ও সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে পাঁচ বছর শেষেই অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য সরকারের তরফে চাপ বাড়তে থাকে।
অন্যদিকে একজন কারখানা মালিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার আদেশ দেন।
সূত্র জানিয়েছে, গতকালের বৈঠকে অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে কারখানা সংস্কার তদারকির লক্ষ্যে তাদের অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। অন্যদিকে ব্র্যান্ড, শ্রমিক অধিকার ফোরাম ও ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ থেকেও চাপ রয়েছে। কিন্তু এসব কারখানা দেখভালের জন্য আরসিসি প্রকৃত অর্থেই এখন প্রস্তুত কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে রায় রমেশ চন্দ্র ইত্তেফাককে বলেন, শতভাগ সংস্কার হওয়া কারখানার মধ্যে চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে অ্যাকর্ড ২৫টি কারখানা আরসিসির কাছে হস্তান্তর করবে। পর্যায়ক্রমে আরো কারখানা হস্তান্তর করবে। এর মাধ্যমে আরসিসির সক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করবে। অন্যদিকে সরকার বলছে, যেহেতু আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে গুটিয়ে নেওয়ার জন্য, ফলে অ্যাকর্ডের পরবর্তীতে থাকার বিষয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই। আগামী শুক্রবার অ্যাকর্ডের সভা হবে। ওই সভায় এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।