সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের টানা দুই দিনের ধর্মঘটে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুই দিনে প্রায় ১৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
সূত্র বলছে, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯০ ভাগই হয় সড়কপথে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটের ফলে অন্য যানবাহনের সঙ্গে বন্ধ আছে বাণিজ্য সহায়ক ট্রেইলর, কার্গো ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান কিংবা পিকআপ ভ্যান।
এ সময় সমুদ্রবন্দর কিংবা স্থলবন্দর থেকে দেশের কোথাও পণ্য সরবরাহ করা যায়নি। সম্ভব হয়নি কারখানা থেকে মালামাল জাহাজীকরণের কাজও। নৌ এবং বিমান পথ সচল থাকলেও আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে খুব একটা কাজে আসেনি। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে প্রভাব পড়েছে সমুদ্র ও স্থলবন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রমেও। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, গত দুই দিনে এই বন্দরেই ১৬ হাজার কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। বিজিএমইএ বলছে, মোংলাসহ অন্য স্থলবন্দর হিসাবে আনলে এ সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
পোশাক শিল্প মালিকদের দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, শ্রমিক ধর্মঘটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাক খাত। চলতি অর্থবছর ৩২ হাজার ৬৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ হিসাবে প্রতিদিন ৯০.৮০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হচ্ছে। পরিবহন সংকটের কারণে ২ দিনে ১৮১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করা যায়নি।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জনগণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে জিম্মি করে এমন নৈরাজ্য মোটেও কাম্য নয়। দুই দিনে যা হয়ে গেল সেটি নিঃসন্দেহে স্থিতিশলী অর্থনীতির গায়েও চপেটাঘাত। তিনি প্রশ্ন করেন, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের সময় তারা (শ্রমিক) কোথায় ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং জনগণের জিম্মি করে দাবি আদায়ের পথ বেছে নেয়াটা কোনোভাবেই দেশের স্থিতিশীল অর্থনীতি সমর্থন করতে পারে না। এটা হওয়াও উচিতও নয়। এটি বিদেশিদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেয়।
বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে পোশাক শিল্পের উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে। গত দুই দিন বন্দর থেকে কাঁচামাল যেমন কারখানায় ঢুকতে পারেনি, তেমনি পণ্যও বন্দরে সরবরাহ করা যায়নি। এমন নৈরাজ্য থেকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যমুক্ত রাখতে মঙ্গলবার আমরা হাইওয়ে ডিআইজির সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা নির্বিঘ্ন পণ্য পরিবহনের জন্য পুলিশি প্রটেকশনের অনুরোধ করেছি। পণ্য বন্দরে পৌঁছাতে ২০১৩-১৪ সালের আন্দোলনের সময়ও পুলিশ আমাদের সহায়তা করেছিল।
বিজিএমইএ সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির যুগান্তরকে বলেন, কর্মবিরতির কারণে পোশাক খাত মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তৈরি পোশাক শিপমেন্ট করতে না পেরে এয়ারবাস করতে হয়েছে। অনেকের রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে গেছে।
এফবিসিসিআইর উদ্বেগ : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, এ কর্মবিরতির ফলে মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে এফবিসিসিআই বলেছে, পরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে কোথাও পণ্যজট হচ্ছে, আবার অনেক পণ্য পচে যাচ্ছে। কৃষক মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এছাড়াও রফতানি পণ্যসামগ্রী জাহাজীকরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং রফতানিকারকরা কার্গো বিমানের মাধ্যমে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে এবং রফতানিকারকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় এফবিসিসিআই দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে শ্রমিক ফেডারেশন সদস্যদের কাজে ফেরার আহবান জানিয়েছে।