তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলোর ৮১ শতাংশ শ্রমিক কোনো কারখানায় টানা চার বছরের বেশি কাজ করতে পারে না। এর মানে তারা ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়। দেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বেবিলন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হাসান খান তাঁর গবেষণা থেকে লেখা বই ‘রেডিমেড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ, আ স্টাডি অন সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স’ শীর্ষক বইয়ে এমন কথা লেখেন। বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অধ্যাপক আ কা ফিরোজ আহমদ, অধ্যাপক আকতার হোসেন, অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন, অধ্যাপক আরফিনা ওসমান, অধ্যাপক মাসুদুর রহমান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ হাসান বলেন, চাকরির বয়স পাঁচ বছর হলেই শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিট দিতে হয়। তা যাতে না দিতে হয় সে জন্য পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ কৌশলে ওই সময়ের আগেই তাদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে। ফলে দেখা যায়, ৮১ শতাংশ শ্রমিক একটি নির্দিষ্ট কারখানায় চার বছরের বেশি সময় কাজ করতে পারে না। ১০ বছরে গেলে আবারও নতুন ধারায় শ্রমিকদের আরো বেশি চাকরিকালীন সুবিধা দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু শ্রমিকরা এসব সুবিধা পায় না।
ছুটি থেকেও শ্রমিকরা বঞ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, নৈমিত্তিক, চিকিৎসা, অর্জিত, উৎসব ছুটিসহ বছরে একজন শ্রমিক ৩৫ দিন ছুটি পায়। শ্রম আইন অনুসারে এই ছুটি কাটানোর সুযোগ থাকলেও তারা এই ছুটি ভোগ করতে পারে না। দেখা যায় কারখানার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং উত্পাদনের চাপ থাকায় তারা তাদের এসব ছুটি ভোগ করতে পারে না।
এ ছাড়া অর্জিত ছুটি নগদ অর্থ হিসেবে নেওয়ার সুযোগ থাকায় কোনো কোনো শ্রমিক বছরের পর বছর এসব ছুটি নেয় না। ফলে এমনও দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, ১২ বছর একটানা কাজ করেছে কোনো ছুটি ভোগ করা ছাড়াই।
শ্রম আইনে বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চলে (ইপিজেড) পোশাক কারখানায় একই খাতে একই কাজ করে বেশি মজুরি ও সুবিধা পায়। এখানকার শ্রমিকরা ভালো পরিবেশে কাজ করে। ভালো বেতন ও গাড়ি দিয়ে কারখানায় যাতায়াত করে। এ ছাড়া বছর শেষে বেতনের সঙ্গে বার্ষিক ভাতা যোগ হয় ১০ শতাংশ। অন্যদিকে ইপিজেডের বাইরে থাকা শ্রমিকরা বার্ষিক ভাতা পায় মাত্র ৫ শতাংশ।
পোশাক খাত টেকসই করতে যেসব অঞ্চলের শ্রমিকরা এ খাতে বেশিসংখ্যক কাজ করে ওই সব অঞ্চলে পোশাক কারখানা স্থানান্তরের প্রস্তাব করে তিনি বলেন, বেশির ভাগ কারখানা ঢাকা ও চট্টগ্রামে হলেও ৪০ শতাংশ রংপুর ও ১৭ শতাংশ রাজশাহীর শ্রমিক এ খাতে কাজ করে। মোট ৫৭ শতাংশ শ্রমিক এ দুই জেলা থেকে এসে কাজ করে। ওই সব অঞ্চলে পোশাক কারখানা স্থানান্তর করা যেতে পারে। এটা করা গেলে এ খাত আরো টেকসই হবে।