রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশের পোশাক খাতের সংস্কারে কাজ করা ইউরোপের ক্রেতা জোট প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ডের বর্ধিত সময়ের পর আর মেয়াদ বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের পোশাক কারখানাগুলোর সংস্কার কাজ পরিদর্শনের জন্য নির্ধারিত পাঁচ বছরের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এরপরও আরো ছয়মাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই মেয়াদও আগামী ৩০ নভেম্বর শেষ হবে। কিন্তু তারপরও অ্যাকর্ড থাকতে চায়।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ডেনমার্ক সরকারের সহযোগিতায় পোশাক কারখানার উত্পাদন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নেওয়া প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও ডেনিস ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্সটাইল এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন স্টেপ আপ প্রকল্পের হেড অব সিএসআর (ডেনিস ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্সটাইল) পিয়া অগার্ড, ডেনিস ফ্যান অ্যান্ড টেক্সটাইলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থমাস ক্লুজেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে আদালতে নির্দেশনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা আদালতের বাইরে যেতে পারব না। এছাড়া বিশ্বের কোথাও এই ধরনের সুযোগ নেই। তারা ভারত, চীন ও ভিয়েতনামে যেতে পারে না। অথচ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার দোহাই দিয়ে তারা বাংলাদেশে থাকতে চায়। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেক্সাসের একটি সার কারখানা দুর্ঘটনায় প্রায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হয়। এই ঘটনা কেউ জানে না।
তিনি বলেন, আমরা বিপুল বিনিয়োগ করে আমাদের কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করেছি। ৬৭ বেশি গ্রিন কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিবিসি সনদ নিয়ে কাজ করছে। এরমধ্যে ৭টি সেরা কারখানা বাংলাদেশের। ২৮০টি কারখানা সনদ পেতে যাচ্ছে। অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স সংস্কার কাজে পরিদর্শন করেছে ৩ হাজার ৭৮০টি কারখানা। এর মধ্যে মাত্র ৩৯টি কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ পেয়েছে। অ্যাকর্ডের নিন্দা জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, তারা ৫শ’র বেশি কারখানাকে চিহ্নিত করে ক্রেতাদের জানিয়েছে বাংলাদেশ থেকে পোশাক না কিনতে। একটা স্বাধীন দেশে তারা এমনটা কি করতে পারে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ক্রেতাদের পোশাকের দাম বাড়ানোর কথা বললে তারা উত্পাদনশীলতা বাড়াতে বলে। অথচ ৭০ শতাংশ ভোক্তা আমাদের পণ্য ক্রয় করে কমমূল্যে কেনা যায় বলে। তিনি বলেন, উত্পাদনের দিক থেকে আমাদের শ্রমিকরা পিছিয়ে থাকলেও অন্যদিকে মজুরি বাড়ানো নিয়ে চাপ দেওয়া হয়। আমাদের পোশাক খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর প্রায় ৩০০ শতাংশের বেশি মজুরি বাড়ানো হয়েছে। আরো বাড়ছে। তিনি ডেনমার্ক সরকারকে তাদের দেশের আরো বড় বড় ক্রেতাদের বাংলাদেশ থেকে পোশাক সোর্সিং করার পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, স্টেপ আপ কর্মসূচি ডেনিস-এর সহযোগিতায় ডেনিস ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্সটাইল-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ৩০ মাসের এ প্রকল্প নেয় বিএিমইএ।