পোশাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের সুষম খাবার, সুপেয় পানি ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামের ১৫ কারখানায় শুরু হচ্ছে স্বপ্ন প্রকল্প। ২০১৭ সালে ঢাকা ও গাজীপুরের চারটি কারখানায় পাইলট প্রকল্প সফল হওয়ায় চট্টগ্রামে প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)।
পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নারী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করা গেলে পোশাক শিল্পে কাজের মান ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ১৫টি কারখানায় সফল হলে চট্টগ্রামসহ দেশের বাকি কারখানায় প্রকল্পটি চালু করা যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
চলতি দফায় কর্ণফুলী ইপিজেডের জেএমএস, বাংলাদেশ স্পিনার্স অ্যান্ড নিটার্স লিমিটেড, মিনহার ফিন্যান্স গার্মেন্টস এ প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া এশিয়ান অ্যাপারেলস, বেড টেক্স, সিন মিন গ্রুপ, অরগানিক জিন্স লিমিটেড, আফরা ফ্যাশনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের সঙ্গে খুব দ্রুত যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ‘স্ট্রেংদেনিং ওয়ার্কার্স অ্যাকসেস টু পারটিনেন্ট নিউট্রিশন অপরচুনিটিস (স্বপ্ন)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)। নারী কর্মীদের পুষ্টিগত অবস্থা উন্নয়নে কর্মকৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, পুষ্টিকে পোশাক শিল্পের নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তকরণ ও কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার বিতরণ নিশ্চিত করতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইএলও, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘ সময় কর্মক্ষেত্রে অবস্থান, গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন, কর্মসংস্থানের সংকট, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশনের অভাব, নিরাপদ খাদ্যের অপ্রতুলতা কর্মীদের গুণগত খাবার গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে একই ধরনের খাদ্য খেতে অভ্যস্ত করে তোলে। সুষম খাবার ও সুপেয় পানির অভাব এবং অপরিছন্ন পরিবেশে বসবাস নারী কর্মীর অপুষ্টির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে তাদের কর্মোৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। যেসব কারখানা শ্রমিকদের দুপুরের খাবার দিয়ে থাকে প্রকল্পের জন্য সেগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কারখানার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শ্রমিকদের সুষম খাবার দেয়া হবে।
এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্টের সহকারী সমন্বয়ক মো. মাহমুদুল হাসান বণিক বার্তাকে জানান, ‘আমরা চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৭০টি পোশাক কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১৫টি প্রতিষ্ঠানে এ প্রকল্প চালু করা হবে। আমরা মূলত ইপিজেডভিত্তিক পোশাক কারখানা যারা তাদের কারখানায় দুপুরে শ্রমিকদের খাবার দেয়, এমন প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে রাজি হলে আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করব। এ প্রকল্পে যুক্ত হলে মালিকপক্ষকে কোনো আর্থিক লেনদেন করতে হবে না। আমাদের প্রতিষ্ঠান সব খরচ বহন করবে। আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তাদের অনেক পোশাক শিল্প কারখানার মালিক এ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী।’
তিনি আরো জানান, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি তথা ভিশন ২০২১ রূপকল্প বাস্তবায়নের পথে অপুষ্টির প্রাদুর্ভাব একটি বড় বাধা। এজন্য মালিক ও কর্মীদের কথা চিন্তা করে কর্মক্ষেত্রে পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম দুপুরের মেনু প্রদানে মালিকপক্ষকে উদ্বুদ্ধকরণই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং এ প্রকল্পের মাধ্যমে পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের পুষ্টিগত অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। নতুন বছর শুরুর আগেই আমরা অন্তত দুই থেকে তিনটি পোশাক কারখানায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু করব। বাকিগুলো নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়ন শুরু করা হবে।’
বিজেএমইএর কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে পোশাকখাতের উৎপাদন খাতে নারী শ্রমিক ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। পোশাক শিল্প খাতের শ্রমিকদের প্রায় দেড় লাখের বেশি নারী দীর্ঘ অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, আয়রন স্বল্পতায় ভুগছে। এ সংখ্যা জাতীয় গড় মাত্রার চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি। এর আগে দেশের বিভিন্ন পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি সংস্থা গেইন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে। চট্টগ্রামে এ প্রকল্প প্রাথমিকভাবে যদি সফল হয় তাহলে চট্টগ্রামসহ দেশের সব পোশাক কারখানায় এটা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এতে করে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের মান বৃদ্ধি পাবে। যেটা দেশের পোশাক শিল্পের জন্যই মঙ্গলজনক।
এর আগে ২০১৭ সালে ঢাকার লেমি ফ্যাশন, কলম্বিয়া গার্মেন্টসসহ চারটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে এ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রকল্প চালুর পর এসব কারখানার অধিকাংশ কর্মীর রক্তশূন্যতার মাত্রা কমে গেছে এবং তারা সুস্থ শরীর নিয়ে আরো উদ্যোগী হয়ে কাজে উৎসাহ বোধ করেছেন বলে জরিপে উঠে আসে।