আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ভোক্তার কাছে তৈরি পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ‘বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড ইমেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ খাতের বিভিন্ন অর্জন এবং ইতিবাচক চর্চাগুলোর আন্তর্জাতিক প্রচার প্রয়োজন। একই সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা পরিবেশও আরও সহজ হওয়া দরকার, যাতে বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
‘পোশাক খাতে টেকসই সরবরাহ চেইন শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক দিনব্যাপী তিন কর্ম অধিবেশনে এ দুই বিষয়ে জোর দিয়েছেন বক্তারা। গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এ সেমিনারের আয়োজন করে জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউএনডিপি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। এতে উদ্যোক্তা, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রানজি তারিংক বলেন, ইউরোপের ক্রেতারা এ দেশে উৎপাদিত পোশাকের লেবেল থেকে বাংলাদেশ বাদ দিচ্ছেন বলে প্রচার আছে। এর অর্থ ব্র্যান্ড ইমেজ ভালো নয়। বাংলাদেশকে অবশ্যই ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। দুই ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে পোশাকশিল্পে সংস্কার অগ্রগতি হয়েছে। যদিও এখনও তা শেষ হয়নি।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের অর্জনের প্রচার প্রয়োজন। ব্যবসা পরিবেশ উন্নয়নে আরও গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে বিশ্বব্যাংকের এ-সংক্রান্ত সূচকে অগ্রগতি দেখাতে পারে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ইইউ কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার (ওএসএস) বাস্তবায়ন করছে। এ দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে গ্যাস, বিদ্যুতের সেবা ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বিনিয়োগ সহায়ক। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন-সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদন করছে সরকার। আগামীতে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন অগ্রগতিও তুলে আনা হবে।
ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন,সমন্বিত ব্যবসায়িক মডেলে সব পক্ষই লাভবান হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন উপকরণের প্রভাব পরিমাপের ফলে সরবরাহ চেইনে ঘাটতিগুলো পূরণ করা সম্ভব হয়, যা টেকসই উন্নয়নকে সহজ করবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বড় ব্র্যান্ড মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সারের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্বপ্না ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ লিডটাইম একটা বড় সমস্যা। এ ছাড়া সহজে ব্যবসা পরিচালনায় জটিলতাও প্রকট। এসবের সমাধান প্রয়োজন। এছাড়া মৌলিক মানের পণ্য থেকে উচ্চমূল্যের পোশাকের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। টেকসই সরবরাহ চেইনের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্রিন সনদপ্রাপ্ত কারখানা থেকেই তারা বেশি পরিমাণে পোশাক নিয়ে থাকেন। ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ পোশাক ন্যায্যমূল্যের ভিত্তিতে আমদানি করার পরিকল্পনার কথা জানান সুইডেনভিত্তিক ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এমের প্রতিনিধি বাসিরুন নবী খান। তিনি বলেন, কম মূল্যের সুবিধায় বাংলাদেশে আসেন ক্রেতারা। তবে যেসব কারখানা থেকে এইচ অ্যান্ড এম পোশাক নেয় সেগুলোর কর্তৃপক্ষকে উচ্চমূল্যের পোশাকে যেতে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
পোশাক উৎপাদন কার্যক্রমে উত্তম চর্চা প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন বলেন, তার ডেনিম কারখানায় দুই হাজার ৮০০ শ্রমিকের সবাইকে মজুরির বাইরেও অন্য অনেক সুবিধা দেওয়া হয়।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশে এইচএসবিসির প্রধান নির্বাহী ফ্রাসোঁয়া দ্য ম্যারিকো বলেন, তার ব্যাংকের গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যকর সরবরাহ চেইন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সহায়তা দিচ্ছেন তারা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে সহায়তা করছে এইচএসবিসি।