চীনসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি কমবে। আর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে বিশ্বে পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ সার্বিক রপ্তানি।
এমনকি এই যুদ্ধে বিশ্ব সরবরাহ ব্যবস্থায় বিচ্যুতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যেতে পারে। যদিও একই সঙ্গে বাংলাদেশের সাময়িক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
গতকাল শনিবার মতিঝিলে ‘বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশে প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) এই সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শুভাশিষ বসু।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকলেও চলতি বছর এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক ক্রেতা আবার বাংলাদেশে ফিরছে। এর ফলে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। এ ছাড়া সাময়িকভাবে আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগেও সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর থেকে চীন শুল্ক কমানোর ফলে লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও চীন থেকে সরে যাওয়া ক্রেতারা বেশির ভাগ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ভারতে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও কিছু আসছে।
তবে বাংলাদেশ আমদানিকারক হিসেবে সুখবর হলো, তুলা ও সয়াবিনের দাম কমেছে বিশ্ববাজারে। তুলার ওপর ১০ শতাংশ কর কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে স্টিলের দাম বেড়ে যাবে। এদিকে চীন থেকে তুলা আমদানি আদেশ বেশি আসার কারণে ভারত তুলার দাম বাড়িয়েছে। তাই ভারত থেকে তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খরচ বাড়বে। প্রবন্ধে বলা হয়, চীন ডলারের সঙ্গে কয়েকটি দেশের মুদ্রার মান কমানোর ফলে দেশটি থেকে আমদানির খরচ কমবে।
সেমিনারে বক্তারা জানান, বিশ্বের অনেক ক্রেতা বাংলাদেশে তাদের কাজের আদেশ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে অনেক কারখানা মালিক তাঁদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে করে বাংলাদেশ দীর্ঘ মেয়াদেও সুফল পেতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগাতে হলে সরবরাহব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আবুল কাসেম খান বাংলাদেশের রপ্তানি এবং চীনের বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) বড় বিকল্প হতে পারে বলে উল্লেখ করেন। এ জন্য ব্যবসা সহজ করার পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে চীনের স্থানান্তর হওয়া বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে সক্ষমতা যথেষ্ট নয় বলে স্বীকার করেছেন বাণিজ্যসচিব। এ জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। আরো বক্তব্য দেন ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য্য, আইএফসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাশরুর রিয়াজ প্রমুখ।