বিশ্ব অর্থনীতির দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিংবা কোন পক্ষ সুবিধা পাবে-তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। দীর্ঘমেয়াদে এ যুদ্ধ চলতে থাকলে বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এর মধ্যেই সুখবর এসেছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ যুদ্ধের ফলে পোশাক রপ্তানির একটি বড় অংশ চীন থেকে সরে যেতে পারে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত এর মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারে। গার্মেন্টস খাতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম এবং ভারতও বড় সুবিধা পাওয়ার তালিকায় রয়েছে। আর মাঝামাঝি পর্যায়ের সুবিধা পেতে পারে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান। অন্যদিকে কিছু কারণে ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও মায়ানমারের পোশাক রপ্তানিকারকরা এ সুবিধা ধরতে পারার সম্ভাবনা কম। গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট লন্ডন থেকে প্রকাশিত দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকার একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এটি মূলত গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী কাজ করে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্য যুদ্ধ চলমান থাকলে আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের ওপর আরও নতুন নতুন পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে পারে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চীন থেকে পোশাক আমদানি কমিয়ে অন্য দেশগুলোতে ঝুঁকতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যতম তিন গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ ‘সবচেয়ে বেশি’ সুবিধা পেতে পারে। বাংলাদেশের এ সুবিধা পাওয়ার পেছনে অপেক্ষাকৃত কম দরে পোশাক উত্পাদনে সক্ষমতার বিষয়টিকে সামনে আনা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি সুগঠিত গার্মেন্টস শিল্প রয়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধের আগে থেকেই এইচ এন্ড এম, গ্যাপ, লেভি’স এবং জারা’র মতো বৃহত্ আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় করছে। চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ হলে এই ব্র্যান্ডগুলোর বাংলাদেশ থেকে ক্রয় বাড়ানো সহজ হবে। তবে বাড়তি এ সুযোগ ধরার জন্য স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বৈশ্বিক তৈরি পোশাকের বাজারের মধ্যে চীন একাই জোগান দেয় সাড়ে ৩৪ শতাংশ। এর পর একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের হিস্যা ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ভিয়েতনাম ও ভারতের যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ ও ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এর বাইরে বাদবাকি দেশগুলো ৫০ শতাংশ পোশাকের জোগান দেয়। বিশ্ববাজারে বর্তমানে চীনের পোশাক রপ্তানি ২৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৩৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। চীনের গার্মেন্টস পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন ট্যারিফ আরোপ করলে অন্য প্রতিযোগীরা এ সুবিধা পাবে। বিশেষত চীনের হাত থেকে অপেক্ষাকৃত স্বল্প মূল্যের পোশাকের অর্ডারের একটি ভালো অংশ চলে যেতে পারে।
অবশ্য দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ (অর্ডার) বাড়াতে শুরু করেছে। অন্যতম বড় পোশাক রপ্তানিকারক ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার পোশাক তৈরিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও তা-ই মনে করেন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, মার্কিন ক্রেতারা ইতোমধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানে ক্রয়াদেশ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করছেন। আর বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে তিনি বেশকিছু বাড়তি ক্রয়াদেশ পেয়েছেন। এ জন্য চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তিনি।