নিম্ন মজুরির কারণে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম হওয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে স্বল্প খরচে তৈরি পোশাক বানিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারগুলোয় বিপণন করে আসছে বৈশ্বিক বড় ব্র্যান্ডগুলো। এর সুবাদেই পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। দেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসছে পোশাক খাত থেকে। আশঙ্কার বিষয় হলো, তৈরি পোশাক খাতে সমীহজাগানিয়া এ আধিপত্য হারাতে পারে বাংলাদেশ। নিয়ারশোরিং ও অটোমেশনের সুবিধা নিতে ভোক্তা দেশগুলোর কাছাকাছি স্থানে শিল্প স্থানান্তরের কথা বলছে বিপণন উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানগুলো। একই কথা ভাবছেন তৈরি পোশাক বিপণনসংশ্লিষ্টরাও। বিষয়গুলো এসেছে নিউইয়র্কভিত্তিক ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান ম্যাকিনজি অ্যান্ড কোম্পানির সাম্প্রতিক এক জরিপেও।
নিয়ারশোরিং ও অটোমেশন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বৈশ্বিক শিল্প খাতে বহুল ব্যবহূত দুটি শব্দ। বাণিজ্য ব্যবস্থায় নিয়ারশোরিং হচ্ছে (ভোক্তা দেশের) কাছাকাছি কোনো দেশে ব্যবসা স্থানান্তর। মূলত পণ্য পরিবহন ব্যয় ও সময় কমানোর পাশাপাশি সম্ভাব্য সর্বোচ্চ উৎপাদন ধরে রাখার সুবিধার্থে এটি করা হয়। আর উৎপাদন ব্যবস্থার যান্ত্রিকীকরণকে বলা হয় অটোমেশন। তৈরি পোশাক খাতের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে নিয়ারশোরিং অথবা অটোমেশনের দিকে এগিয়েছে। তবে এর মধ্যে কোন পদক্ষেপটি প্রথমে নেয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে দোটানায় আছে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে নিয়ারশোরিং ও অটোমেশনসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ম্যাকিনজি। তাতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সাফল্য ধরে রাখতে বড় বাজারগুলোয় তৈরি পোশাক বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ারশোরিং ও অটোমেশনে ‘সাহসী’ বিনিয়োগ করতে হবে ‘অতিসত্বর’।
এতদিন পর্যন্ত মজুরি ব্যয়কেই মূল বাজারের কাছাকাছি উৎপাদনের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও ম্যাকিনজি বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কম খরচে উৎপাদনকারী দেশগুলোর এ ব্যয়ের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমে আসছে। প্রকৃতপক্ষে এ ব্যয়ের মাত্রা এখন সবখানেই সমান হয়ে আসছে। এমনকি বাংলাদেশের মতো কম খরচে উৎপাদনকারী দেশ থেকেও যদি নিয়ারশোর বাজারে উৎপাদন সরিয়ে আনা হয়, সেক্ষেত্রেও ব্যয় প্রায় একই থাকবে। একটি উদাহরণ এক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি একটি মার্কিন কোম্পানি বাংলাদেশের বদলে মেক্সিকো থেকে জিন্স উৎপাদন করায়, তাহলে বিক্রয় ব্যয় এবং সাধারণ ও প্রশাসনিক ব্যয় যোগ করার আগেই পণ্যটির মার্জিন বেড়ে যায় ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট।
ম্যাকিনজি বলছে, ইউরোপের দেশগুলোয় এখনো বাংলাদেশ থেকে সোর্সিংয়ের পর ইউনিটপ্রতি ব্যয় কমই থাকে। যদিও চীন থেকে উৎপাদন তুরস্কে সরিয়ে আনা এ মুহূর্তে আর্থিকভাবে বেশি লাভজনক। অন্যদিকে কোনো মার্কিন অ্যাপারেল কোম্পানি যদি জিন্স উৎপাদন কার্যক্রম বাংলাদেশ বা চীন থেকে মেক্সিকোয় সরিয়ে আনে, তাহলেও পূর্ণ দামে বিক্রি না বাড়িয়েই নিজের মার্জিন ধরে রাখতে, এমনকি বাড়াতেও পারবে।
নিয়ারশোরিং ও অটোমেশনের এ প্রভাব যাচাইয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সোর্সিং জার্নালের সঙ্গে যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করে ম্যাকিনজি। জরিপের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞসহ তৈরি পোশাক খাতের ম্যানুফ্যাকচারিং ও রিটেইলিং এবং রোবোটিকস ও ব্যবসায়িক স্থিতি নিয়ে কাজ করছেন এমন কয়েকজনের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। মতামত নেয়া হয় অ্যাপারেল খাতের নির্বাহী ও শিল্পসংশ্লিষ্ট অন্যদের কাছ থেকেও।
জরিপে উঠে আসে, লিড টাইম (ভোক্তার হাতে পণ্য পৌঁছানোর সময়) হ্রাস করতে গিয়ে বৈশ্বিক অ্যাপারেল খাত ২০২৫ সালের মধ্যে নিয়ারশোরিংয়ের দিকে এগোবে বলে মনে করেন ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা। উত্তর আমেরিকার বাজারের জন্য নিয়ারশোরিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটি নিয়ারশোরিংয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠবে বলে মনে করছে ৩০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেক্সিকোর পক্ষে অভিমত দিয়েছে ২০ শতাংশ। হাইতি ও গুয়াতেমালাকে এ পদক্ষেপের সুফলভোগী বলে মনে করছে ৭ শতাংশ।
অন্যদিকে ইউরোপের বাজারের জন্য নিয়ারশোরিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে তুরস্ক। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ শতাংশ নিয়ারশোরিংয়ের উৎস হিসেবে দেশটিকে চিহ্নিত করেছে। অন্যদিকে মরক্কোকে চিহ্নিত করেছে ১০ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের পক্ষে অভিমত দিয়েছে ৭ শতাংশ।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কম খরচে উৎপাদনকারী দেশগুলোর ব্যয়ের ব্যবধান যে দিন দিন কমছে; তার সপক্ষে উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫ সালে তুরস্কে উৎপাদনের খরচ ছিল চীনের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। ২০১৭ সালে তা নেমে এসেছে ১ দশমিক ৬ গুণে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাকিনজি বলছে, চাহিদাকেন্দ্রিক মডেল গ্রহণ করতে হলে অ্যাপারেল কোম্পানিগুলোকে ফ্যাশন সাইকেলের সব পর্যায়েই লিভার (পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের মাধ্যম) টানতে হবে। পাশাপাশি নিয়ারশোরিং বা অনশোরিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদনকে নিয়ে আসতে হবে ভোক্তার কাছাকাছি, যাতে করে লিড টাইম কমে আসে।
নিয়ারশোরিংয়ের সপক্ষে আরো যুক্তি দিতে গিয়ে প্রতিবেদনে বিশ্ববাণিজ্যে উত্তেজনা ও ট্যারিফ নীতিকে ভোক্তার কাছে দ্রুত পণ্য পৌঁছানোর পথে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ম্যাকিনজির জরিপে অংশ নেয়া ৮২ শতাংশের মতে, ২০২৫ সালের মধ্যে তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০ শতাংশ উৎপাদন নিয়ারশোরিংয়ে স্থানান্তর করতে পারবে।
ম্যাকিনজির মূল্যায়ন— উৎপাদন ব্যয়ের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে অটোমেশন। মূলত এর মধ্য দিয়েই মেক্সিকোর মতো নিয়ারশোরিংয়ের ক্ষেত্রে লাভবান হতে যাওয়া দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনে সক্ষম হবে।
এছাড়া অটোমেশনের মাধ্যমে সরবরাহ চেইনে শ্রমকাল ৪০-৭০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছে ম্যাকিনজি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, রক্ষণশীলতার সঙ্গে হিসাবের পরও দেখা যাচ্ছে, অটোমেশনের মাধ্যমে প্রতিটি জিন্সের উৎপাদন সময় ৩৬ মিনিট থেকে ২০ মিনিটে নেমে আসবে। অন্যদিকে যেহেতু শ্রমকালের অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় হয় সেলাইয়ে; সেহেতু অটোমেশনের মাধ্যমে এ সময় ১১ মিনিটেও নামিয়ে আনা সম্ভব।
বর্তমান মজুরি ব্যয়ের ভিত্তিতে এ সময় সাশ্রয়কে অর্থের হিসাবে রূপান্তর করে দেখা যাচ্ছে, অটোমেশনের মাধ্যমে জিন্সের পোশাক উৎপাদনের ব্যয় বাংলাদেশের তুলনায় ২০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে যদি জার্মানি নিজেই তার নিজস্ব বাজারের জন্য ডেনিম উৎপাদন করে, তাহলে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাত্রার ওপর নির্ভর করে ব্যয় প্রতি জোড়া ডেনিমে ১৪ ডলার ৮০ সেন্ট পর্যন্ত সাশ্রয় করা সম্ভব। অন্যদিকে ইউরোপীয় বাজারের জন্য নিয়ারশোরিংয়ের প্রধান উৎস তুরস্কে অটোমেশনের মাধ্যমে এক্ষেত্রে প্রতিটি জিন্সের প্যান্টে ১ ডলার ৩০ সেন্ট থেকে ২ ডলার পর্যন্ত উৎপাদন ব্যয় কমানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিয়ারশোর বাজার হিসেবে সাশ্রয়ী উৎস মেক্সিকোয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ব্যয় কমানো সম্ভব ৬০-৯০ সেন্ট পর্যন্ত।
প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘নিয়ারশোরিং ও অটোমেশন; তৈরি পোশাকের সরবরাহ চেইনের এ দুই ফ্রন্টে যেসব অ্যাপারেল কোম্পানি নিজেদের সমৃদ্ধ করে তুলবে, ভবিষ্যতে তারাই সফল হবে সবচেয়ে বেশি। এবং এর মধ্যে শুধু যেকোনো একটিকে গ্রহণ করলেই এ সাফল্য টেকসই হবে না। অ্যাপারেল কোম্পানিগুলোরও এখন আর গতানুগতিক ধারায় ব্যবসা চালিয়ে উন্নতির প্রত্যাশা করার কোনো সুযোগ নেই। ইন্টারনেট ও প্রধান বাজারগুলোর শ্লথ প্রবৃদ্ধির কারণে প্রতিযোগিতা এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি জোরালো। একই সঙ্গে ভোক্তাচাহিদা সম্পর্কে আগে থেকে অনুমান করার বিষয়টিও বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। বড় বাজারগুলোর অ্যাপারেল ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের এখন অনলাইনকেন্দ্রিক পিওরপ্লে (কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা কার্যক্রমে কেন্দ্রীভূত প্রতিষ্ঠান) স্টার্টআপগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে যারা সবচেয়ে হাল ফ্যাশনের পণ্য আনতে পারবে এবং তা দ্রুততার সঙ্গে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে পারবে, তারাই সফল হবে সবচেয়ে বেশি। উপরন্তু অ্যাপারেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ট্রেন্ড তৈরির জায়গাটিও হারিয়ে ফেলেছে। ফ্যাশন কোম্পানির বিপণন বিভাগ নয়, একক প্রভাবক ও ভোক্তারাই এখন বড় পরিসরের ভোক্তাবাজারগুলোয় সবচেয়ে প্রচলিত ট্রেন্ডগুলো তৈরি করছেন। এর সঙ্গে বাজার থেকে বিক্রির মাধ্যমে পুরো দাম তুলে নিতে না পারার ফলে মুনাফা কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশের ওপর অতিউৎপাদনের কুপ্রভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছোট ছোট ব্যাচে দ্রুত পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি চাহিদা তৈরি হওয়া মাত্র বাজারে পণ্য ছাড়ার বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে। এসব বিষয়ের আলোকে বলা যায়, তৈরি পোশাকে সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাজারে পণ্য ছাড়ার গতি ও মৌসুম চলাকালীন সক্রিয়তার মাত্রা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন অ্যাপারেল খাতের দুই-তৃতীয়াংশ নির্বাহী ও বিভিন্ন দেশের চিফ প্রকিউরমেন্ট অফিসারদের (সিপিও) ৮০ শতাংশই বলছে, এ মুহূর্তে এ দুটি বিষয়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সমস্যা হলো, শ্লথ বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া এবং গতানুগতিক সরবরাহ চেইন ও উৎস কাঠামো এখন প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন প্লেয়ারদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই গতিশীল প্রতিযোগীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।’
গতি বাড়ানো ও চাহিদাকেন্দ্রিক ব্যবসায়িক মডেলে রূপান্তর করা ছাড়া আগামী দশকে বড় বাজারগুলোর অ্যাপারেল ব্র্যান্ড ও রিটেইলাররা সফল হতে পারবে না বলে প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়। এতে আরো বলা হয়, কম খরচের সুবিধা আদায় করতে গিয়ে মার্কিন ও ইউরোপীয় বড় বড় অ্যাপারেল ব্র্যান্ড ও রিটেইলাররা দুই দশক আগে রীতিমতো তাড়াহুড়ো করে তৈরি পোশাকের উৎপাদন কার্যক্রম যতটা সম্ভব এশিয়ায় স্থানান্তর করে। ওই সময়ের পর থেকে এ খাতের প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়ায় ইউনিটপ্রতি মূল্যকেন্দ্রিক। পরবর্তী সময়ে তা চীন থেকেও আরো কম ব্যয়ে উৎপাদন করার মতো স্থানে স্থানান্তর করা হয়।
প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, এ শিল্প এখন এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে প্রান্তিক ব্যয়ের তুলনায় গতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে টেকসই কৌশল হয়ে উঠেছে বেসিক কমপ্লায়েন্সের নীতির অংশ। গতানুগতিক সরবরাহ চেইন এখন চ্যালেঞ্জের মুখে এবং রিটেইলারদেরও তাদের পণ্যের উৎস ও উৎপাদন মডেলের বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করে দেখতে হচ্ছে। নিয়ারশোরিং ও উৎপাদনের যান্ত্রিকীকরণ বাড়ানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকার সক্ষমতা আরো বাড়বে। বৃহদায়তনের বাজারগুলোয় কর্মরত অ্যাপারেল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেগুলো অটোমেশন প্রযুক্তিকে আত্মীকরণ করে নিতে পারবে, গতি ও স্থায়িত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে সেগুলোই হয়ে উঠবে আগামীদিনের জয়ী।
তবে নিয়ারশোরিং ও অটোমেশনের কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমনটা মনে করছেন না দেশের তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা। ম্যাকিনজির প্রতিবেদনটি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বণিক বার্তাকে বলেন, অটোমেশনের ক্ষেত্রে বলতে হয়, এটি এদেশে যেমন হবে, আবার বিশ্বের যেখানেই শিল্প আছে সেখানেও হবে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমার দেশের একজন শ্রমিকের ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ও পূর্ব ইউরোপ বা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর শ্রমিকদের ঘণ্টাপ্রতি মজুরি। দুটোর পার্থক্য অনেক, আমাদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি মজুরি ওই দেশগুলোয়। নিয়ারশোরিংয়ের মূল সুবিধাটি হলো, এতে সময় অনেক কম লাগবে। কিন্তু যত দ্রুতই পণ্য পৌঁছানো হোক না কেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিয়ারশোরিংয়ের বিষয়টিও বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না। কাজেই অটোমেশন ও নিয়ারশোরিংয়ের কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আধিপত্য হারাবে, এমন আভাস সঠিক নয়। বন্দর অবকাঠামো ভালো না থাকাসহ নানা কারণে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দুর্বল হতেই পারে। তাই বলে বাংলাদেশের পোশাক খাতের আধিপত্য চলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।