মোট মজুরি থেকে মূল্যস্ফীতি বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই প্রকৃত মজুরি। বাংলাদেশে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার কমছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য বলছে, ২০১৩ সালেও দেশে প্রকৃত মজুরি বেড়েছিল ৬ শতাংশের বেশি। ২০১৭ সালে তা ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আর গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার বার্ষিক গড়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এ হার দক্ষিণ এশিয়ার গড় এমনকি ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার চেয়ে কম।
বৈশ্বিক শ্রমমজুরি নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে আইএলও। এ-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার ধারাবাহিক কমে যাওয়ার পাশাপাশি লিঙ্গভিত্তিক প্রকট মজুরি অসাম্যের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রকৃত মজুরি প্রবৃদ্ধির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে প্রকৃত মজুরি বেড়েছে বার্ষিক গড়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। যদিও বাংলাদেশে বেড়েছে এর চেয়েও কম, ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। একই সময়ে প্রতিবেশী ভারতে শ্রমের প্রকৃত মজুরি বার্ষিক গড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। এছাড়া শ্রীলংকায় বেড়েছে ৪ ও নেপালে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। তবে পাকিস্তানে বেড়েছে সবচেয়ে কম, বার্ষিক গড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে।
আইএলওর এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, কৃষি ও উত্পাদন খাতের মতো দুটো বড় খাতে প্রকৃত মজুরি কমেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থাও এটা স্বীকার করে, প্রকৃত মজুরি কমেছে। ২০০৮-১১ সালের মধ্যে কৃষি ও উত্পাদন দুই খাতেই প্রকৃত মজুরি বেড়েছিল। অনেকেই বলছিলেন, শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, কিন্তু তা হয়নি। ভোক্তামূল্য সূচক যে হারে বাড়ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হারে যদি নামিক মজুরি না বাড়ে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃত মজুরি প্রবৃদ্ধি হবে না। রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদরা বলবেন, প্রকৃত মজুরি নির্ভর করে শ্রমের উত্পাদিকার (প্রডাক্টিভিটি) ওপর, শ্রমের উত্পাদিকা যদি না বাড়ে, তাহলে প্রকৃত মজুরি বাড়তে পারে না। আমার কাছে থাকা উপাত্তে দেখা যায়, ২০১০-১৫ সালে গড়ে বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সুতরাং উত্পাদিকা না বাড়ার ফলে প্রকৃত মজুরি বাড়ছে না, এটা বলা যায় না। বরং উত্পাদিকা বৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রকৃত মজুরি বাড়ছে না। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বেগের বিষয়।
আইএলওর তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশে ২০১৩ সালে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৪ সালে এ হার ২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৫ সালে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশে। পরের বছর এ হার আরেকটু বেড়ে হয় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে সর্বশেষ ২০১৭ সালে প্রকৃত মজুরি প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশে নেমে আসে।