Home Bangla Recent কারখানা সংস্কারে অবাধ্যদের নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ

কারখানা সংস্কারে অবাধ্যদের নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ

তৈরি পোশাক খাতের দেড় হাজারেরও বেশি কারখানার কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা মূল্যায়ন চলছে জাতীয় উদ্যোগে। এর মধ্যে অনেক কারখানাই ত্রুটি সংস্কারে গড়িমসি করছে। সরকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও সংস্কারে অবাধ্য এসব কারখানা নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এসকেলেশন প্রটোকলের। এ প্রটোকল অনুযায়ী, সংস্কার কার্যক্রমে অনগ্রসর কারখানাগুলোর ওপর চাপ বাড়াবে সরকার।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় এসকেলেশন প্রটোকলের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। সরকারের প্রতিনিধিসহ এ প্রটোকল অনুসরণে নীতিগত সম্মতি দেন সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিকরা। কিন্তু কারখানা মালিকরা প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণে গড়িমসির মনোভাব দেখিয়ে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এসকেলেশন প্রটোকলের মাধ্যমে মালিকদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে চাইছে সরকার।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) সূত্র জানিয়েছে, এসকেলেশন প্রটোকলে মোট ছয়টি ধাপ অনুসরণ করে কারখানার সংস্কার অগ্রগতি তদারক করা হবে। ধাপগুলোর মধ্যে আছে সতর্কতামূলক চিঠি, রফতানি লাইসেন্স ও ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) স্থগিত, বন্ধ ঘোষণার আগে চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি এবং চূড়ান্ত ধাপে শ্রম আইনের ৬১-এর ২ ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধের ঘোষণা।

 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ আহমেদ বলেন, গত আগস্টে সরকার ও আইএলওর মধ্যে রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের (আরসিসি) সুশাসন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি ইউনিটের ভবিষ্যৎ বিষয়ে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসকেলেশন প্রটোকলের খসড়া উপস্থাপন করে আইএলও, যাতে নীতিগত অনুমোদনও দেয়া হয়। এখন শ্রম মন্ত্রণালয় প্রটোকলটি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ত্রুটি সংস্কার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সৈয়দ আহমেদ আরো বলেন, সরকারি কর্মকর্তা, পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সমন্বয়ে মন্ত্রণালয় একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করেছে। পর্যালোচনা করে কমিটি এসকেলেশন প্রটোকলের খসড়াটি চূড়ান্ত করবে। দ্রুতই এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশা করছি। তখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য এ প্রটোকল অনুসরণে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হবে।

গত সেপ্টেম্বরে সংস্কার কার্যক্রমে অনগ্রসরতার কারণে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রদত্ত সেবা ইউডি ইস্যু না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই সময় মোট ২১৯টি কারখানাকে ইউডি সেবা না দিতে পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠনকে পৃথক চিঠি দেয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিআইএফই। ২১৯ কারখানার মধ্যে ১৩৪টি বিজিএমইএর সদস্য ও ৭৪টি বিকেএমইএর সদস্য। বাকি ১১টি কারখানা উভয় সংগঠনের সদস্য।

রানা প্লাজা ধসের পর জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিপিএ) আওতায় অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও জাতীয় উদ্যোগে শুরু হয় পোশাক কারখানা মূল্যায়ন কার্যক্রম। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আওতাধীন কারখানাগুলোর ৮৫ শতাংশ ত্রুটি সংস্কার হলেও জাতীয় উদ্যোগের আওতায় শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন করেছে ১ শতাংশেরও কম কারখানা। একাধিক সতর্কতা জারির পরও সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি নেই, এমন ২১৯ কারখানার বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে ইউডি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিলম্বিত করার তত্পরতা শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় সরকারের দিকনির্দেশনার ত্রুটি সংস্কারে অগ্রগতি না থাকলেও সচল আছে অনেক কারখানা।

ডিআইএফই সূত্র জানিয়েছে, যে কারখানা সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেনি বা যাদের অগ্রগতি অত্যন্ত কম (২০ শতাংশের নিচে), তাদের এসকেলেশন প্রটোকলের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার কার্যক্রম তদারক করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যেসব কারখানার সংস্কারকাজ একেবারেই নগণ্য, সেগুলোর ইউডি ইস্যু না করার জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে বলা হয়েছে।

এনটিপিএর আওতায় পরিদর্শনের মাধ্যমে মোট ৩ হাজার ৭৮০টি কারখানার প্রাথমিক মূল্যায়ন করেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জোট। এর মধ্যে অ্যাকর্ডের আওতায় ১ হাজার ৫০৫ ও অ্যালায়েন্সের আওতায় রয়েছে ৮০৯টি কারখানা। আর জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৯।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here