Home Bangla Recent অকাযর্কর চামড়া শিল্প নগরীর সিইটিপি

অকাযর্কর চামড়া শিল্প নগরীর সিইটিপি

সাভার চামড়া শিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বজর্্য শোধনাগার (সিইটিপি) কাযর্কর হচ্ছে না। প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিমির্ত সিইটিপি শুরু থেকেই নিমার্ণ ত্রæটির কারণে বজর্্য শোধন করতে পারছে না। যার কারণে বিসিকের এই চামড়া শিল্প নগরীতে অবস্থিত ট্যানারির প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া ব্যবহার করতে পারছে না রপ্তানিকারকরা।

তবে পরিস্থিতি উত্তরণে দেশের সবর্বৃহৎ ট্যানারি এপেক্স এবং বে-ট্যানারি নিজস্ব অথার্য়নে ইটিপি নিমাের্ণর অনুমতি পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে সিইটিপি নিমাের্ণ। অথচ নিমার্ণ ত্রæটির কারণে শিল্প নগরীর তরল বজর্্য পরিশোধন করা যাচ্ছে না। ফলে দূষিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ। বুড়িগঙ্গার মতোই ভয়াবহ দূষণের শিকার সাভারের ধলেশ্বরী নদী।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাভারে ১৯৯ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরের সব ট্যানারির বজর্্য পরিশোধনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বজর্্য পরিশোধনাগার নিমার্ণ করছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, চামড়া শিল্পনগর প্রকল্পের এক হাজার ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ৬৪২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সিইটিপি এবং অন্যান্য বজর্্য পরিশোধন ব্যবস্থা নিমাের্ণর জন্য বরাদ্দ রয়েছে। বিসিক সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়াডর্ নিমাের্ণ চীনা প্রতিষ্ঠান জিংসু লিংঝি এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন কোম্পানিকে ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল কাযাের্দশ দেয়। কাজ শেষের সময়সীমা ছিল দেড় বছর। অবশ্য সাড়ে ছয় বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও সিইটিপির নিমার্ণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিইটিপিতে লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অথচ লবণ থাকলে বজর্্য পরিশোধনে ব্যবহৃত রাসায়নিক কোনো কাজ করে না। চামড়া শিল্পে প্রচুর লবণ ব্যবহার হয়। ফলে বজ্যর্ পরিশোধন করা হলেও শোধিত পানিতে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা কাক্সিক্ষত পযাের্য় আসছে না। একই সঙ্গে বজ্যর্ শোধনের পরিমাণগত সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সিইটিপি এলডবিøউজি সনদ না পেলে বাংলাদেশি চামড়া কিনবে না বড় ব্র্যান্ডগুলো। ফলে দেশে ভালো মানের কম দামি চামড়া থাকা সত্তে¡ও বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে।

একই সঙ্গে দেশীয় চামড়া শিল্প বড় ধরনের হুমকির মুখেও পড়েছে। যার কারণে বড় বড় ট্যানারি মালিকরা নিজ উদ্যোগে ইটিপি নিমাের্ণর প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের কাছে। প্রধানমন্ত্রীর নিদেের্শর পর অনুমোদন দিতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। কিন্তু বড় ট্যানারি মালিকরা ইটিপি নিমার্ণ করতে পারলেও ছোট ট্যানারি মালিকদের সে সক্ষমতা নেই। যার কারণে তাদের উৎপাদিত চামড়া বিদেশে রপ্তানি করতে পারছে না।

বিপুল অংকের টাকা ব্যয়ে এত বড় নিমার্ণ ত্রæটি স্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকা উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন এলএফএমইএবি সভাপতি সাইফুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, সরকার সিইটিপির পাশাপাশি যাদের বড় কারখানা রয়েছে তাদের জন্য ইটিপির অনুমোদন দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিদের্শনা দিয়েছেন, বড় ট্যানারির মালিকরা চাইলে আলাদা করে ইটিপি করতে পারবেন। আলাদাভাবে ইটিপি করা হলে দূষণ থেকে উত্তরণ হবে। তখন রপ্তানিতে আরও গতি আসবে। তিনি বলেন, বড় ট্যানারির বজর্্য বেশি। এসব ট্যানারি ইটিপি করলে দূষণের প্রভাব তেমন থাকবে না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানাসর্ অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পরিবেশবান্ধব করতে এখনও অনেক কাজ বাকি। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি ড্রেনেজ অবস্থা খুবই খারাপ। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বজ্যর্ পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) ঠিকমতো কেমিক্যাল দেয়া নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থাও নেই। যার কারণে তরল বজর্্য সঠিকভাবে পরিশোধন হচ্ছে না।

বিটিএ সভাপতি বলেন, সাভারে পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প নগরী গড়ে না ওঠার পেছনে বিসিকের গাফিলতিও রয়েছে। তারা ভুল তথ্য দিয়ে হাজারিবাগের ট্যানারিকে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করেছে। এ ছাড়া বারবার সময় বাড়ানোর পরও শিল্প নগরীর কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে পরিবেশবান্ধব ট্যানারি এখনও আমরা গড়ে তুলতে পারেনি।

জানতে চাইলে চীনা ঠিকাদারি কোম্পানির প্রকল্প কনসালট্যান্ট ও সাভার চামড়া শিল্প নগরীর সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, এখন তরল বজ্যর্ ফিল্টার করার কাজ (ডি-ওয়াটারিং) করা হচ্ছে না। কারণ এ কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এখনো দেশে এসে পেঁৗছায়নি। পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতিও এখনো আসেনি। তবে কাজ শুরুর সাড়ে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো যন্ত্রপাতি কেন আসেনি জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here