যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর ওই দেশে পোশাক রপ্তানি সাড়ে ৪ শতাংশ কমে গেলেও চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি করেছে ৪৬৪ কোটি মার্কিন ডলারের, যা দেশীয় মুদ্রায় ৩৯ হাজার ৪৪০ কোটি টাকার সমান।
বড় এই বাজার ঘুরে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ইতিবাচক প্রভাব রাখছে বলে জানিয়েছেন পোশাক খাতের একাধিক উদ্যোক্তা। তাঁরা বলছেন, অতিরিক্ত শুল্কের হাত থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা চীন থেকে পোশাক কেনা কমিয়ে অন্য দেশ থেকে নিচ্ছেন। এ জন্য বাংলাদেশের অনেক পোশাক কারখানা বাড়তি ক্রয়াদেশ পাচ্ছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) গত সপ্তাহে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক আমদানির চিত্র তুলে ধরে। তাদের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দেশটির বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৭ হাজার ১০২ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তবে রানা প্লাজা ধসের পর বাজারটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে থাকে। সর্বশেষ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৫০৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল, যা ২০১৬ সালের চেয়ে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। তবে চলতি বছরের প্রথম মাস থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি।
বাজারটিতে গত ১০ মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ এ জন্য ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ১৬৬ কোটি বর্গমিটার পরিমাণ কাপড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৫৭ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ের তৈরি পোশাক। অর্থাৎ এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের বাজার হিস্যা বেড়েছে। গত বছর বাজার হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ।
নিজের কারখানার উদাহরণ দিয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে পরিমাণ রপ্তানি করেছিলাম এবার সেটি দ্বিগুণ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণেই মূলত দুই-তিন মাস ধরে ক্রয়াদেশ বাড়ছে। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল আমাদের চেয়েও ভিয়েতনাম ও ভারত বেশি পাচ্ছে।’
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাকশিল্পে নিম্নতম মজুরি চলতি মাসে কার্যকর হয়েছে। সে জন্য ক্রেতাদেরও পোশাকের দাম বাড়াতে হবে। ক্রেতারা সেই বাড়তি দাম দিতে রাজি না হলে ক্রয়াদেশের পাশাপাশি রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।