Home Bangla Recent পোশাক রফতানি আদেশ কমেছে

পোশাক রফতানি আদেশ কমেছে

জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে রফতানি বাণিজ্যে। বিগত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা আছে ক্রেতাদের। এবার সেরকম কিছু না হলেও নির্বাচন ঘিরে কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে তাদের। সময় মতো পণ্য বুঝে পাওয়া নিয়ে কোনো কোনো ক্রেতা সংশয়ে আছেন। এ কারণে প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের রফতানি আদেশ কমে গেছে। আগামী কয়েক মাসের রফতানি আয়ে সেই চিত্র দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আপাতত রফতানি আয়ে সেই ছাপ নেই। কারণ, ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে আগেভাগেই যত বেশি সম্ভব পণ্য বুঝে নিয়েছেন তারা। এ কারণে গত দুই মাসে পোশাক রফতানি থেকে রেকর্ড পরিমাণ আয় এসেছে। রফতানি আদেশের চিত্র পাওয়া যায় কাঁচামাল আমদানির অনুমতি বা ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) সনদের হিসাব থেকে। কোনো ক্রেতা থেকে রফতানি আদেশ পাওয়ার পর ওই সংখ্যক পণ্য তৈরিতে যে পরিমাণ কাপড়, সুতা বা অন্যান্য কাঁচামাল শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা যায় সেটাই ইউডি সনদ। সরকারের পক্ষে বিজিএমইএ এই সনদ দিয়ে থাকে।

বিজিএমইএর তথ্য বলছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ইউডি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ। গত বছরের এই তিন মাসে উদ্যোক্তারা ইউডি নিয়েছেন ৬ হাজার ৯১৯টি। এবছরের তুলনীয় গত তিন মাসে এ সংখ্যা ৬ হাজার ৭৭৪টিতে নেমে এসেছে। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য তিন মাসে ইউডি কমেছে ১৪৫টি। গত তিন মাসে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। এই প্রবণতা অনুযায়ী ইউডি কমে যাওয়ার পরিবর্তে বরং কমপক্ষে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতায় ১২৩ জন নিহত হন। হরতাল-অবরোধ চলে টানা ৪৫ দিন। অস্থিতিশীলতায় আর্থিক ক্ষতির হিসাব বিশ্নেষণে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, ওই সময়ের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা। গবেষণা সংস্থা সিপিডির বিশ্নেষণে বলা হয়, আমদানি-রফতানি বিঘ্নিত হওয়ায় রফতানিমুখী পোশাক খাতের আর্থিক ক্ষতি এক হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। ওই সময় পোশাক খাতের ক্রেতারা ঢাকায় আসেননি। অনেক ক্রেতা রফতানি আদেশ বাতিল করেছেন। অনেক পণ্য স্টকলটের শিকার হয়। অর্থাৎ দেরির কারণে পণ্য নিতে ক্রেতাদের অস্বীকৃতির কারণে স্থানীয় বাজারে সামান্য দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন উদ্যোক্তারা। কোনো কোনো ক্রেতা অন্য দেশে রফতানি আদেশ নিয়ে গেছেন। ওই সব ক্রেতা অনেকেই আর বাংলাদেশে ফেরেননি। এবার নির্বাচনকে ঘিরে সেরকম পরিস্থিতি হবে না বলে মনে করেন পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। সমকালকে তিনি বলেন, জনগণ আর জ্বালাওপোড়াও রাজনীতি মেনে নেবে না। গত জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যারা সহিংসতা করেছে, তারাও সেটা বুঝতে পেরেছে। ফলে এবার নির্বাচন ঘিরে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হবে না। রফতানি বাণিজ্যে তেমন প্রভাব পড়বে না। বিজিএমইএ সহসভাপতি এবং সেহা ডিজাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মান্নান কচিও একই অভিমত জানিয়ে সমকালকে বলেন, গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এবারের নির্বাচনে সব দলই অংশ নিচ্ছে। ফলে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া সে সময়ের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি কেউ সমর্থন করেনি। ফলে নির্বাচনের ফল নিয়ে যেকোনো পরাজিত পক্ষও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যাবে না। তিনি জানান, কোনো কোনো ক্রেতার এ বিষয়ে আশঙ্কার জবাবে উদ্যোক্তারা তাদের আশ্বস্ত করছেন।

 

তবে বিজিএমইএর শীর্ষ দুই নেতার বক্তব্যে শতভাগ একমত নন রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স  অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তৈরি পোশাকের নিট খাতের রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক এই সহসভাপতি সমকালকে বলেছেন, নির্বাচন ঘিরে ক্রেতাদের অভিজ্ঞতায় অনেকেই রফতানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছেন। ইউডির তথ্য সেই কথাই বলছে। ক্রেতারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। কয়েক মাসে রফতানি আয় তাহলে বাড়ছে কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনী অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় ক্রেতারা আগেভাগেই নিজেদের স্টোরে পোশাক সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছেন। এ কারণে কয়েক মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রফতানি হয়েছে। এছাড়া সামনে বড় দিন থাকায় প্রতিবছর এ সময় রফতানি বেশি হয়ে থাকে।

ঢাকায় বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট গত প্রায় এক বছর আগে থেকেই কয়েক দফা বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে ক্রেতাদের উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়ে আসছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশে বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সে বিবেচনায় ক্রেতারা সঙ্গতভাবেই আগামী নির্বাচনের আগে রফতানি আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি ভাববেন। তার এই বক্তব্যের পর ক্রেতা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন বিজিএমইএ নেতারা। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্রেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here