তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির মেয়াদ আবারও বাড়ছে। এর ফলে তৃতীয়বারের মতো বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের জোর আপত্তি থাকলেও সরকারের উচ্চপর্যায়ের সুপারিশে এই মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খবরটি নিশ্চিত করে জানায়, দু-এক দিনের মধ্যেই মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তবে এবার বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এক বছরের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হলেও বাড়তে পারে তিন থেকে চার মাস।
সূত্র জানায়, বর্তমান কমিটি মেয়াদ বাড়ানোর জন্য নতুন করে আবেদন করায় বিরোধী পক্ষ তীব্র প্রতিবাদ করেছে। এ ছাড়া আবেদনটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ঘোর আপত্তি জানায়। তবে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের অনুরোধে এবং সংগঠনের নিয়ম রক্ষার সুবিধার্থে এই সময় বাড়ানো হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, বিজিএমইএর বর্তমান পরিষদ গত ৪ ডিসেম্বর আরো এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে। সময় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়, সম্প্রতি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন সামনে রেখে মজুরি নিয়ে পোশাক অধ্যুষিত এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। এই অসন্তোষ এড়াতে কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হোক। এ ছাড়া কারওয়ান বাজার থেকে উত্তরায় সুষ্ঠুভাবে বিজিএমইএর কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য সময় বাড়ানো প্রয়োজন বলে তারা মনে করে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করে বিজিএমইএর বর্তমান কমিটি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা থাকলেও পোশাকশিল্পের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ৫ জুন ২০১৭ ছয় মাসের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়। সরকার ২২ জুন ২০১৭ ছয় মাসের মেয়াদ বাড়ায়।
পরে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে বর্তমান কমিটি এবং একই দিনে সরকার এক বছরের মেয়াদ বাড়ায়। তৃতীয়বারের মতো গত ৪ ডিসেম্বর এক বছরের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়, যা এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম পারভেজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, বিজিএমইএর বর্তমান পরিষদের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর আবেদন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। ওই আবেদন কিছুতেই নায্য নয়। এর ফলে বিজিএমইএর সদস্যরা ভীষণ হতাশ। কেননা একটি কমিটির এমন স্বেচ্ছাচারিতা চলতে দেওয়া যায় না। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর এক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমান পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে জুজুর ভয় দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। নিয়ম বাড়ানোর আবেদনেও সঠিক প্রক্রিয়া মানা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ধরনের আবেদনের আগে পর্ষদের বোর্ড সভায় অনুমোদন নেওয়ার রীতি রয়েছে। বর্তমান কমিটি এসবের কিছুই মানেনি।
এদিকে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণার কথা বর্তমান কমিটির। কিন্তু দুই বছরের জন্য নির্বাচিত কমিটি প্রায় চার বছর ক্ষমতায় আছে। নির্বাচন এলেই কোনো না কোনো অজুহাতে তা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কারণ তারা জানে, নির্বাচন হলে জয়ী হতে পারবে না। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন নিয়ে ছাড় দিতে রাজি নয় ফোরাম ও স্বাধীনতা পরিষদের নেতারা।
জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সময় বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে। তবে তা খুব কম সময়ের জন্য। তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদের ক্ষমতা সুষ্ঠুভাবে হস্তান্তরের জন্য আমরা সরকারি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি।’ বিষয়টি দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে তিনি জানান।