দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাকে সরকারের উল্লেখযোগ্য নীতিসহায়তার ফলে ২০১৮ সালে বেশ সুসময়ই পার করেছে এ খাত। সদ্য প্রকাশিত রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান এমন চিত্রই স্পষ্ট করছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৮-১৯) দেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৬৫ শতাংশ। আগের বছর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পুরো সময়ে এই খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৮৬ শতাংশ।
এ ছাড়া গত বুধবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিকারকদের জন্য উৎসে কর অর্ধেকের বেশি কমিয়ে দিয়েছে। আগে উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ দিতে হলেও এখন দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন এর ফলে সরকার ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচনের আগে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য সরকার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে। ওই মজুরি ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর করার কথা। শ্রমিকরা চলতি মাসেই সেই মজুরি পাবে। কিন্তু মজুরিবৈষম্য অভিযোগের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দেন মালিকরা।
এত কিছুর পরও কোনো রকম নেতিবাচক প্রভাব ছাড়া ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। আলোচ্য সময়ে ৭৫৯ কোটি ডলারের নিট পোশাক এবং ৭১৭ কোটি ডলারের ওভেন পোশাকের রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৯২ শতাংশ। ওভেন পোশাকে ১৭.৪৮ শতাংশ।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, চার থেকে ছয় বছর ধরে দেশের পোশাক খাতে অনেক সংস্কারকাজ হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বমানের সবুজবান্ধব কারখানা হয়েছে। পোশাক খাতে তেমন কোনো অস্তিরতা ছিল না বললেই চলে। এর ফলে বিশ্ববাজারে আমাদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি এবং এরই ধারাবাহিকতায় আজকের অগ্রগতি। এসব অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে সামনের দিনগুলোতে। এটা করা গেলেই ২০২১ সালে দেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে না পারলেও কাছাকাছি সম্ভাবনা আছে।
জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের বছরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমে গিয়েছিল, সেই হিসেবে বর্তমান রপ্তানি আয় আশাব্যঞ্জক। তবে অন্য খাতগুলোতে রপ্তানি আয় বেশ কমে গেছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত বলা হলেও এসব খাতে রপ্তানি আয় উদ্বেগজনক। ফলে পোশাকনির্ভরতা আরো বাড়ছে।
তিনি বলেন, রপ্তানি বাড়ানোর অন্য বাধাগুলো দূর না করে উৎসে কর কমানো মোটেও ঠিক হয়নি। চামড়া ও অন্য খাতগুলোর যেসব সমস্যা আছে সেগুলোকে আমলে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে সাভারের ট্যানারি পল্লী পুরোপুরি কার্যকর করা, কাঁচামাল আমদানিতে ট্যারিফ বাধা, অবকাঠামো এবং ঋণ নিয়ে সমস্যার প্রতি নজর দেওয়া উচিত। উৎসে কর কমানোর ফলে পোশাক খাতই সুবিধা পাচ্ছে। অন্য খাতগুলো এগিয়ে আসার সুযোগ পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া আমাদের টেক্স জিডিপি রেশিও (কর এবং ডিজিডিপির অনুপাত হার) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে কম। বাংলাদেশের ১০ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশ, নেপালের ১৬ শতাংশ, ভারতের ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। এর ফলে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।’