বাংলাদেশের গার্মেন্টসে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে নতুন বাজারে রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এক দশক ধরে চেষ্টার পর এসব বাজারে রপ্তানি বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) এসব দেশে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশেরও বেশি। আলোচ্য সময়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের গার্মেন্ট রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে ইউরোপে প্রায় ১০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রায় ১৯ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে।
গতানুগতিক বাজারের বাইরে নতুন বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে সরকার ও উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল হিসেবে দেখছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান ইত্তেফাককে বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা এখন দর কমানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ফলে এ দুটি বাজারের বাইরে আমরা নজর বাড়িয়েছি। অন্যদিকে গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের সংস্কারের বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা গিয়েছে। এছাড়া চীনের উত্পাদন মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তারা ক্রেতাদের সঙ্গে দরে মেলাতে পারছে না। ফলে তাদের ছেড়ে দেওয়া ক্রেতাদের (নতুন বাজারের) কিছু অংশ বাংলাদেশে আসছে।
ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোই মূলত বাংলাদেশের জন্য নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত। এসব বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেও বিশেষ প্রণোদনার অংশ হিসেবে রপ্তানি মূল্যের উপর তিন শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে।
নতুন বাজারের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্কসহ আরো কয়েকটি দেশ রয়েছে। এ দেশগুলোতে গত ছয় মাসে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ২৮৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের গার্মেন্টস পণ্য। এটি আলোচ্য সময়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত গার্মেন্টসের প্রায় ১৭ শতাংশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২১২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা ছিল মোট রপ্তানিকৃত গার্মেন্টসের ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
নতুন বাজারের মধ্যে গত ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে জাপানে। দেশটিতে আলোচ্য সময়ে ৫৪ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশটিতে চলতি বছর নাগাদ গার্মেন্টস রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি বৃদ্ধির হারে শীর্ষে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত। আলোচ্য সময়ে প্রতিবেশী এই দেশটিতে গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়েছে ১৪৩ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ২৭ কোটি ডলার। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে নতুন বাজারের মধ্যে রপ্তানি কমে যাওয়া একমাত্র দেশ হলো তুরস্ক। দেশটিতে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ডলারে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ছয় মাসে অস্ট্রেলিয়ায় গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ব্রাজিলে ১৫ শতাংশ, চিলিতে ৫৬ শতাংশ, চীনে ৬১ শতাংশ, কোরিয়ায় ৫৬ শতাংশ, মেক্সিকো, ৩৯ শতাংশ, রাশিয়ায় ২১, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫৬ ও অন্যান্য দেশ মিলিয়ে ১৯ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে।
রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, নতুন বাজারের মধ্যে ব্রাজিল, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক বাদে অন্য দেশগুলোতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়।