পাটকে সোনালি আঁশ বলা হয়। এক সময় পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। এখন সেই রমরমা অবস্থা না থাকলেও পাট আবার অর্থকরী পণ্য হয়ে উঠছে। মাঝে বিভিন্ন সমস্যা এ পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তবে সেসব সমস্যা কাটিয়ে পাট বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত পণ্যের মর্যাদা ফিরে পাচ্ছে। পাটগাছের পাতা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাক। বর্তমানে জার্মান প্রযুক্তিতে দীর্ঘ গবেষণার পর এই পাতার মাধ্যমে উপকারী এমন চা-জাতীয় পানীয় তৈরি হচ্ছে, যা অকল্পনীয়।
সম্প্রতি ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বেশ কয়েকটি স্টলে এ চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। জানা যায়, এই পানীয় ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ মারাত্মক সব রোগ থেকে মুক্তি দেবে।
পাটজাত পণ্য সব সময়ই পরিবেশবান্ধব। ইদানীং চট, বস্তা, পলিথিন ছাড়াও চোখ ধাঁধানো শোপিস, চেয়ার, দরজা, ফুলদানি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, স্যুট-প্যান্ট, চাদর, এমনকি ডেনিমও পাট থেকে তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য যেমন সৌন্দর্যবর্ধক তেমনি শতভাগ পরিবেশবান্ধব এবং দামও সাধ্যের মধ্যে। ফলস্বরূপ, এসবের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের। ফলে নিঃসন্দেহে এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
২০১১ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৫ হাজার অংশগ্রহণকারীর হাতে যে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পাটের ব্যাগ তুলে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকেই। আশ্চর্য হলেও সত্য, বর্তমানে নামিদামি গাড়ি তৈরির কোম্পানিও পাট ব্যবহার করছে।
জার্মানির বিএমডব্লিউ কোম্পানির সর্বাধুনিক ইলেকট্রিক গাড়ির ভেতরে বক্স বডি ও এর উপাদান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে পাট ব্যবহৃত হচ্ছে। জার্মানির ভক্সওয়াগন, জাপানের নিশান ও টয়োটা গাড়ির কাঁচামাল হিসেবেও বাংলাদেশের পাটের কদর রয়েছে।
সব দিক বিবেচনায় পাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই দ্রুত বিভিন্ন যুগোপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ করতে হবে। সরকার দেশে ও বিদেশে পাট পণ্যের ব্যবহার বিস্তৃত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
পাট উৎপাদন থেকে শুরু করে পাট সংগ্রহ, সংরক্ষণ- সবকিছুতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পাট চাষে কৃষকরা দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।
তাই পাটের চাষ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধাসহ কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করতে হবে। এর ফলে তাদের মধ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা বাড়বে। পরিণতিতে পাট চাষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
এ পৃষ্ঠপোষকতার হাত পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারকেই বাড়াতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে দেশের সব ক্ষেত্রে পাট পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাটের ব্যাপক চাষাবাদ, বন্ধ পাটকলগুলো চালু করা, পাটের বহুমুখী ব্যবহার ইত্যাদির ফলে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।
পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্য হোক আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এ সবের মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে পাট আবার দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।