Home Bangla Recent পোশাক খাতে ফের অস্থিরতার পাঁয়তারা!

পোশাক খাতে ফের অস্থিরতার পাঁয়তারা!

over unrest

নির্বাচনের পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং পোশাক খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তৎপর রয়েছে একটি চক্র। এর জন্য কিছু অরাজনৈতিক সংগঠন পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। সংগঠনগুলো তাদের নেতাকর্মী-সমর্থকদের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় পাঠিয়ে বেতনবৈষম্য নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করে। এ ছাড়া পোশাক খাতের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষুব্ধ একটি মহলের ইন্ধনও রয়েছে এই শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে। পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানেও বিশাল ভূমিকা রাখছে এ খাত। প্রায় ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিকের এ খাতের ৮০ শতাংশ নারী। বাংলাদেশের এ খাতের ওপর নজর সারা বিশ্বের। কোনোভাবে খাতটিকে অশান্ত করা গেলে বিশ্ববাসীর নজর যেমন কাড়া যায়, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থও হাসিল করা যায়।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের চলমান আন্দোলন দেশের একটি বিদেশি দালালচক্রের ইন্ধন। তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব করছে। মজুরি সমস্যা সমাধানে গত মঙ্গলবার সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় কমিটি করার পরও আজ (গতকাল) ২৫ থেকে ৩০টি কারখানায় হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে এক দল বহিরাগত। নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে মালিকপক্ষ-শ্রমিকপক্ষ-সরকারপক্ষ মিলে নতুন মজুরি কাঠামোর সিদ্ধান্ত হয়। এই মজুরি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের বেতনের সঙ্গে যোগ হয়ে চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের হাতে যাওয়ার কথা। এর আগেই শ্রমিক অসন্তোষ একটি অশুভ ইন্ধন বলে আমার মনে হয়েছে।’

জানা গেছে, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো কোনো কোনো শ্রমিক সংগঠন প্রথম থেকেই মেনে নেয়নি। তারা ১৬ হাজার টাকা নতুন মজুরি ঘোষণার দাবি জানায়। গত মাসে জাতীয় নির্বাচন ও নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন একসঙ্গে হওয়ায় ওই সুযোগে সরকারকে চাপে ফেলতে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে মজুরিবৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রমিকরা। রাজধানীর আশপাশের কিছু কারখানার শ্রমিকরাও কাজ বন্ধ করে সড়কে নেমে মজুরি সমন্বয়ের দাবি জানায়। এ সময় অশান্ত হয়ে ওঠা কারখানাগুলো মালিকরা সাময়িক বন্ধ রাখেন। তবে পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও শ্রমিক নেতারা বৈঠকে বসে নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের আন্দোলনে যাবেন না বলে একমত হন।

নির্বাচন শেষ হতেই চার দিন ধরে রাজধানীর এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আজমপুর, আব্দুল্লাহপুর, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরে বিক্ষোভ এবং কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবারও দেশের সবচেয়ে বড় পোশাক শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া ও টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পরিবর্তনের দাবি জানায়।

শ্রমিক নেতারা জানান, নতুন মজুরি কাঠামোতে সপ্তম গ্রেডে মোট মজুরি বেড়েছে দুই হাজার ৭০০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি বেড়েছে এক হাজার ১০০ টাকা। ২০১৩ সালে মজুরি বোর্ড বাস্তবায়নের পর প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সে কারণে ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডের পুরনো অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছে। কিন্তু নতুন মজুরি কাঠামোয় শ্রমিকদের বড় একটি অংশের মূল মজুরি বাড়েনি। এর ফলে ওভারটাইম করেও প্রত্যাশিত অর্থ পাবে না তারা। একই অবস্থা হবে উৎসব ভাতার ক্ষেত্রেও। পাঁচ বছর পর নতুন মজুরি কাঠামোয় প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রমিজ মিয়া জানান, ১০ বছর  ধরে তিনি ওই কারখানায় কাজ করছেন। ৩ নম্বর গ্রেডের একজন শ্রমিক তিনি। বর্তমানে তাঁর মোট মজুরি ৯ হাজার ৫০০ টাকা। আর মূল মজুরি ছয় হাজার টাকা। ২০১৮ সালে সরকার যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে তাতে দেখা যায়, তাঁর মূল মজুরি পাঁচ হাজার ১৬০ টাকা। ফলে ঘোষিত মজুরির চেয়ে তাঁর মূল মজুরি কমে এসেছে। এর ফলে ওভারটাইম করে বাড়তি অর্থ পাবেন না তিনি। চাকরি ছেড়ে গেলে কিংবা চাকরি হারালে সার্ভিস বেনিফিটও কম পাবেন। উৎসব ভাতার ক্ষেত্রেও তাই।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, কোনো শ্রমিকের মজুরি কম হবে না। কোথাও কোনো অসংগতি থাকলে তা সংশোধন করা হবে। প্রতিটি গ্রেডের শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে। কোনো শ্রমিকের মূল মজুরি বার্ষিক ভাতার কারণে ছয় হাজার টাকা হলে তাদের সেই ছয় হাজার টাকা মজুরি ধরেই ৫১ শতাংশ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত, খাদ্য ভাতাসহ মজুরি ১০ হাজার ৮৫০ টাকার বেশি দাঁড়াবে। এ কারণে শ্রমিকদের আতঙ্কের কিছু নেই।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার বলেন, ‘পোশাক খাতে সাতটি গ্রেডে মজুরি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডের শ্রমিকরা (অপারেটর) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৩ সালের ঘোষিত মজুরি এবং পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালে ঘোষিত মজুরিতে তাদের তুলনামূলক বেতন বাড়েনি। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।’

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পোশাক খাত সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের সময় সরকারকে বিপাকে ফেলতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা পোশাক অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় আসতে শুরু করে। তারা বিভিন্ন কারখানায় কাজ  নেয়। তারাই কারখানার ভেতর থেকে নতুন মজুরিবৈষম্যের উসকানি দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। সরকার পোশাক খাতের প্রতিনিধিকে বাণিজ্যমন্ত্রী বানিয়েছে। তিনি এরই মধ্যে এ সংকট মোকাবেলায় বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সরকার-মালিক-শ্রমিক নেতা এই ত্রিপক্ষীয় ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here