ক্রমবর্ধমান রফতানির কারণে বস্ত্র ও পোশাক তৈরির যন্ত্রপাতির অন্যতম সম্ভাবনাময় বাজারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। দেশে সুতা, কাপড় ও পোশাক তৈরিতে প্রতি বছর শতকোটি ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে যন্ত্রের চাহিদাও বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। গতকাল রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী ‘দ্য ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট মেশিনারি এক্সিবিশন (ডিটিজি)’। প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এতে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশে বস্ত্র ও পোশাক যন্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধির এ তথ্য জানিয়েছেন।
]ডিটিজির এবারের আয়োজনটি ১৬তম সংস্করণ। এটি যৌথভাবে আয়োজন করছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও হংকংয়ের ইয়র্কারস ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিসেস কোম্পানি লিমিটেড।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, বস্ত্র ও গার্মেন্ট খাতে আমাদের সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধিতে ডিটিজির গুরুত্ব অনেক। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বস্ত্র ও পোশাক যন্ত্রের প্রদর্শনী এটি। এ বছর বিশ্বের ৩৭ দেশের ১ হাজার ২০০টি টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট মেশিনারিজ প্রস্তুতকারক কোম্পানি প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। এতে মোট ১১টি হলে ১ হাজার ৬৫০টি বুথ থাকছে। প্রদর্শনীটি প্রতিদিন দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রদর্শনীতে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না।
গতকাল প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। প্রধান অতিথি ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও নীতিগত স্থিতিশীলতা আমাদের সব সময়ের প্রত্যাশা। আগামী ১০ বছরে জ্বালানি মূল্য কেমন হতে পারে, সে ধারণাও আমরা পেতে চাই। এছাড়া ব্যাংক ঋণে সুদের হারও সিঙ্গেল ডিজিট হওয়া চাই। পণ্য বহুমুখীকরণ, বিশেষ করে কৃত্রিম সুতা ও কাপড় উৎপাদনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ব্যাপক বলে জানান তিনি।
বিটিএমএ সভাপতি আরো বলেন, বস্ত্র খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে যথাযথ অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া এ খাতের প্রসারে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানও নিশ্চিত করতে হবে। ডিটিজির মতো প্রদর্শনী বস্ত্র খাতের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন তিনি।
চায়না সুইং মেশিনারি অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি চেন জি বলেন, চীনের জন্য বস্ত্র ও পোশাক যন্ত্রের অন্যতম বৃহৎ বাজার বাংলাদেশ। প্রতি বছর চীন থেকে ১০০ কোটি ডলারের বেশি সুইং মেশিন বাংলাদেশে রফতানি হয়। এছাড়া অন্যান্য যন্ত্রেরও এদেশে চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর এ চাহিদা বাড়ছে।
প্রদর্শনীর সহ-আয়োজক ইয়র্কারস ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিসেস কোম্পানির প্রেসিডেন্ট জুডি ওয়াং বলেন, ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে ডিটিজির আয়োজন করছি আমরা। চলতি বছর অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ। তিনি জানান, ডিটিজির গত আয়োজনে স্পট অর্ডারের পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ডলার।
বিটিএমএর তথ্যমতে, বর্তমানে টেক্সটাইল খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, যা বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে একক খাতে সর্বোচ্চ। এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতের স্পিনিং উপখাত নিট আরএমজির প্রয়োজনীয় সুতার ৮০-৮৫ শতাংশ ও ওভেন উপখাত ওভেন আরএমজির প্রয়োজনীয় ফ্যাব্রিকসের ৩৫-৪০ শতাংশ সরবরাহ করে আসছে।