পোশাক খাতের শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো গত ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। চলতি মাসে নতুন কাঠামো অনুযায়ী শ্রমিকের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শিল্পাঞ্চলে ফের দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। এ অবস্থায় নতুন কাঠামো বাস্তবায়নে অসমর্থ কারখানা মালিকরা ব্যবসা ছাড়তে প্রস্থান নীতি (এক্সিট পলিসি) চেয়েছেন।
পোশাক খাতে মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা শেষে গত বছর নভেম্বরে ন্যূনতম ৮ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। সরকারের এ ঘোষণায় আপত্তি থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে নতুন মজুরি কাঠামো মেনে নেয় মালিকপক্ষ।
গত ডিসেম্বরে নতুন মজুরি কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় অস্থিরতা দেখা দেয়। কিছু কারখানায় কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কারখানা বন্ধও ঘোষণা করা হয়। এ পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য গত ৩ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসে পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও মূল বিষয় ছিল নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন। মজুরিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকার কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের কর্মবিরতি নিয়েও আলোচনা করেন মালিকরা। আলোচনায় অনেক মালিক নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নে অসমর্থতার কথা জানিয়ে প্রস্থান নীতি বা এক্সিট পলিসির দাবি তোলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ৩ জানুয়ারির এ সভায় প্রায় আড়াইশ কারখানার মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিল ডলারের অবমূল্যায়ন ও নগদ প্রণোদনার হার বৃদ্ধি। এক্ষেত্রে সাধারণ প্রণোদনা (জেনারেল ইনসেনটিভ) ১০ শতাংশ এবং নতুন বাজারের জন্য ১৫ শতাংশ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বস্ত্র মূল্যের পরিবর্তে সরাসরি প্রত্যাবাসিত রফতানি মূল্যের ওপর নগদ প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা চেয়েছেন শিল্প মালিকরা। এছাড়া প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধের দাবিও তোলেন তারা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, সভায় আলোচনার মূল বিষয় ছিল মজুরি। নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে এক্সিট পলিসি চেয়েছেন অনেক কারখানার মালিক।
তিনি বলেন, যদি কারখানা বন্ধ হয় তাহলে মালিকরা টাকা-পয়সা দেবেন কীভাবে? মজুরি দিতে গিয়ে কারখানা বন্ধ হতে পারে অথবা অন্য যেকোনো কারণেও কারখানা বন্ধ হতে পারে। তবে এজন্য অবশ্যই যথাযথ কারণ (জেনুইন গ্রাউন্ড) থাকতে হবে। এ ধরনের জেনুইন গ্রাউন্ডে মালিকরা নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ এক্সিট পলিসি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হতে যাচ্ছে, তাই বাংলাদেশেও এখন এ ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন। ছোট-বড় সব কারখানার মালিকদের জন্যই এ ধরনের পলিসির প্রয়োজন আছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি আমরা। আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে প্রস্তাবও দেব।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, মালিকরা নতুন মজুরি কাঠামো প্রসঙ্গে বলেছেন, নতুন কাঠামো যেন কোনোভাবেই পরিবর্তন করা না হয়। ন্যূনতম মজুরি যেন ৮ হাজার টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। কাঠামো সংশোধন হলে তা যেন শুধু মূল মজুরিকে ঘিরে হয়, সে পরামর্শও দিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
সভায় কারখানা মালিকরা আরো বলেন, পোশাক পণ্যের ক্রেতারা প্রতিনিয়ত তাদের আমদানি মূল্য কমাচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যেই কারখানার নিরাপত্তার মান উন্নয়ন ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ঘাটতি মোকাবেলা করছেন মালিকরা। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে নতুন কাঠামো বাস্তবায়ন করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে নতুন কাঠামো যারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না, তাদের জন্য এক্সিট পলিসি দেয়া প্রয়োজন।
শ্রম অসন্তোষ প্রসঙ্গেও সভায় মালিকরা নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে যারা শ্রম অসন্তোষকে উসকে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।