Home Bangla Recent সাভারে বিভিন্ন কারখানায় তিন শতাধিক কর্মী ছাঁটাই

সাভারে বিভিন্ন কারখানায় তিন শতাধিক কর্মী ছাঁটাই

মজুরি সমন্বয়ে আন্দোলনের জের

মজুরি সমন্বয়ের দাবিতে টানা আট দিনের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শেষে কাজে যোগ দিয়েছেন সাভারের আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। তবে আন্দোলনের কারণে একধরনের শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে তাদের। বিক্ষোভের ঘটনায় আশুলিয়া এলাকার অন্তত ছয় কারখানায় ছাঁটাই করা হয়েছে তিন শতাধিক কর্মী। কারখানা ফটকে চাকরিচ্যুত কর্মীদের ছবিসহ তালিকা টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাভার ও আশুলিয়া থানায় বিভিন্ন কারখানার পক্ষ থেকে অন্তত ১০টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোয় আসামি করা হয়েছে এক হাজারের বেশি শ্রমিককে। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ৪৪ জন।

জানা যায়, টানা আট দিনের শ্রমিক অসন্তোষের পর গত মঙ্গলবার থেকে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও বিভিন্ন কারখানায় ঝুলছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের নোটিস। সরেজমিনে আশুলিয়ার বুড়ির বাজার, জিরাবো ও কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার এআর জিন্স প্রডিউসার লি., এফজিএস ডেনিম ওয়্যার লি. ও লিলি ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকদের ছবি সংবলিত ছাঁটাইয়ের তালিকা কারখানার মূল ফটকে ঝুলতে দেখা গেছে। এসব তালিকায় তিন শতাধিক শ্রমিকের নাম থাকলেও শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত প্রায় আট শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এ সময় প্রায় ১০টি কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিস ঝুলতে দেখা গেছে।

টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবি আদায় হয় না। তাই শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে থাকেন। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় যারা নাশকতাকারী এবং ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কিন্তু কোনো নিরপরাধ শ্রমিক যেন ছাঁটাইয়ের শিকার না হয়, সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখা উচিত।

অন্যদিকে কারখানায় ভাঙচুরসহ মারপিট করে ক্ষতিসাধন, চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ১০ জানুয়ারি ৫৫ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডায়িং মিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবদুস সালাম। ১১ জানুয়ারি এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ আজিজ বাদী হয়ে ৬২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আড়াইশজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। এদিন একই অভিযোগে নিট এশিয়া লিমিটেড কারখানার প্রধান ব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫০ জনের নামোল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ১২ জানুয়ারি অরবিট অ্যাপারেলস লিমিটেডের শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। একই দিন মাহমুদ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার এইচআর বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ শাহ আলম বাদী হয়ে ২৯ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। এছাড়া ১৩ জানুয়ারি হা-মীম গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৬০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন।

এছাড়া সাভার মডেল থানায় দায়ের করা দুটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে ভাঙচুর, লুটপাট, মারধর ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে ১৩ জানুয়ারি ২৪ শ্রমিকের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং-৫০) করেছেন জেকে গ্রুপের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারিক হাসান। একই অভিযোগে সাভারের হরিণধরা এলাকার ডার্ড গ্রুপের দীপ্ত অ্যাপারেলসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা একটি মামলা (৬৯) দায়ের করেছেন।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান জানান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহল শ্রমিক আন্দোলনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গার্মেন্টশিল্পকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে। তারা এসব আন্দোলনে ইন্ধন দিয়ে এটিকে আরও বড় ও ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। এরই মধ্যে তাদের শনাক্ত করেছি এবং অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

তবে সাধারণ ও নিরীহ শ্রমিকরা কোনো হয়রানির শিকার হবেন না বলে নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার বলেন, দোষী ও অপরাধীদেরই শুধু আইনের আওতায় আনা হবে। তাই সাধারণ শ্রমিকদের ভীতির কোনো কারণ নেই। যারা কাজ করতে চান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here