পোশাক শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি বেড়েছে ছয় গ্রেডে। প্রথম থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বেসিক বা মূল মজুরিও বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন হারে। সপ্তম গ্রেডে মজুরি বোর্ড ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। মজুরি পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির তৃতীয় বৈঠকে রোববার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংশোধিত মজুরি কাঠামো গত ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর ধরা হবে। আগামী মাসের মজুরির সঙ্গে বকেয়া হিসেবে বাড়তি অর্থ পাবেন শ্রমিকরা।
কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক ব্রিফিংয়ে বিভিন্ন গ্রেডের মজুরি পরিবর্তনের তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রথম গ্রেডের একজন কর্মী এখন থেকে সব মিলিয়ে ন্যূনতম মোট ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন। মজুরি বোর্ডের ঘোষণায় যা ছিল ১৭ হাজার ৫১০ টাকা। ২০১৩ সালের কাঠামো অনুযায়ী গত ৫ বছর ধরে এই গ্রেডের নূ্যনতম মজুরি ছিল ১৩ হাজার টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডের ন্যূতম মজুরি এখন ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা, যা মজুরি বোর্ড নির্ধারণ করেছিল ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা। গত ৫ বছর ধরে এই গ্রেডের মজুরি ছিল ১০ হাজার ৯০০ টাকা।
পর্যালোচনায় তৃতীয় গ্রেডের ন্যূনতম মোট মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা। মজুরি বোর্ডের ঘোষণায় ছিল ৯ হাজার ৫৯০ টাকা। গত ৫ বছর ধরে এ গ্রেডের মজুরি ছিল ৬ হাজার ৮০৫ টাকা। একইভাবে চতুর্থ গ্রেডের মোট মজুরি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা। মজুরি বোর্ডের ঘোষণায় ছিল ৯ হাজার ২৪৫ টাকা। গত ৫ বছর ধরে ছিল ৬ হাজার ৪২০ টাকা। পঞ্চম গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা। মজুরি বোর্ডের ঘোষণায় ছিল ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা। গত ৫ বছর ধরে ছিল ৬ হাজার ৪২ টাকা। ষষ্ঠ গ্রেডে নূ্যনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৪২০ টাকা। মজুরি বোর্ডের ঘোষণায় ছিল ৮ হাজার ৪০৫ টাকা। গত ৫ বছর ধরে ছিল ৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। পর্যালোচনায় সপ্তম অর্থাৎ সবচেয়ে নিচের গ্রেডে মজুরি বোর্ড ঘোষিত ৮ হাজার টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কার্যকর হবে গত ডিসেম্বর থেকে। জানুয়ারিতে নতুন কাঠামোয় মজুরি পাওয়ার পর রাজধানী এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকদের অসন্তোষ, সড়ক অবরোধ ও শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার মালিকপক্ষের ৫ জন, শ্রমিকপক্ষের সমসংখ্যক সদস্য এবং শ্রম ও বাণিজ্য সচিবসহ মোট ২০ সদস্য নিয়ে মজুরি পর্যালোচনায় ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করে সরকার। গোয়েন্দা সংস্থা এসবি, এনএসআই, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও শিল্প পুলিশের প্রতিনিধি রয়েছেন কমিটিতে। রোববারের বৈঠকে কমিটির প্রায় সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, চলমান সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন গ্রেডের মজুরি সমন্বয়ে গত শনিবার রাতে নির্দেশ দেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, শ্রম সচিব এবং বিজিএমইএ নেতাদের গণভবনে ডাকেন। সেখানে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হন তিনি। আলোচনা শেষে গ্রেডভিত্তিক সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন তিনি।
শ্রম অসন্তোষের পেছনে শ্রমিকদের অন্যতম আপত্তি ছিল ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের বেসিক নিয়ে। বেসিক বাড়লে বোনাস, ওভারটাইমসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ে। শ্রমিকদের দাবি, নতুন মজুরি কাঠামোয় বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা যে হারে বেড়েছে; বেসিক সে হারে বাড়েনি।
রোববারের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পর্যালোচনায় ছয় গ্রেডের বেসিকই বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম গ্রেডের বেসিক নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৯৩৮ টাকা। মজুরি বোর্ডের ঘোষণায় যা ছিল ১০ হাজার ৪৪০ টাকা। একইভাবে দ্বিতীয় গ্রেডের ৮ হাজার ২২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ৪৪ টাকা করা হয়েছে। তৃতীয় গ্রেডে ৫ হাজার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩৩০ টাকা করা হয়েছে। চতুর্থ গ্রেডে বেসিক ৪ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৯৩০ টাকা হয়েছে। পঞ্চম গ্রেডে ৪ হাজার ৬৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৫০৫ টাকা ও ষষ্ঠ গ্রেডে ৪ হাজার ৩৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৮০ টাকা হয়েছে। সপ্তম গ্রেডের বেসিক মজুরি বোর্ড নির্ধারিত ৪ হাজার ১০০ টাকা রয়েছে।