প্রায় ৭০০ কোটি টাকার পাটের উৎপাদিত পণ্য পড়ে রয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) গুদামে। এসব পণ্যের ৯০ ভাগেরও বেশি আফ্রিকার দেশ সুদানে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিশীলতার কারণে পণ্যগুলো রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। ফলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। গত অর্থবছর ও চলতি অর্থবছরে বিজেএমসির আওতাধীন ২২টি পাটকলের উৎপাদিত এসব পণ্য অবিক্রীত থেকে গেছে। পণ্যগুলো কবে নাগাদ বিক্রি হবে, তাও সঠিকভাবে বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
সারাদেশে ১৮২টি ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে বিজেএমসি পাট কেনে। বৃহত্তম পাটপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজেএমসি প্রধানত হেসিয়ান কাপড়, ব্যাগ, বস্তার কাপড়, বস্তা, সুতা, জিও-জুট, কম্বল, মোটা কাপড়, সিবিসি ইত্যাদি প্রস্তুত করে, যা সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক তন্তুজাত।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে স্থানীয় বাজারে ২২ হাজার ৩০০ টন ও আন্তর্জাতিক বাজারে ৮৭ হাজার টন পাটপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। অথচ স্থানীয় রাজারে ৭ হাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারে মাত্র ১০ হাজার টন বিক্রি করা হয়েছে। অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারেনি বিজেএমসি। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, বিশে^র ৯০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানি করে বিজেএমসি। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় সুদানে। সেন্ট্রাল আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশেও পাটের বাজার আছে। এ ছাড়া সিরিয়া, ইরান, প্রতিবেশী দেশ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পাটপণ্যের চাহিদা অনেক। এসব দেশে বিজেএমসি প্রতিষ্ঠার আগ থেকেই পণ্য রপ্তানি করে আসছে সরকার। কিন্তু গত কয়েক বছর ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতেও মার্কিন নিষেজ্ঞাধা রয়েছে। ফলে এসব দেশে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এলসির মাধ্যমে লেনদেন করছে না। এ কারণে বিজেএমসির উৎপাদিত পণ্যগুলোও রপ্তানি করা যাচ্ছে না। আর সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
বিজেএমসির কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানির এমন অচলাবস্থা নিরসনে দেশগুলোর সঙ্গে পণ্যের বিনিময়ে আমদানি-রপ্তানির চুক্তিতে যেতে পারে সরকার। পৃথিবীর বহু দেশ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে থাকে। সরকার যদি এমন উদ্যোগ নেয় তাহলে বিজেএমসির অবিক্রীত পণ্যগুলো এসব দেশে সহজে রপ্তানি করা যেতে পারে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বিজেএমসির ৭০০ কোটি টাকার অবিক্রীত পণ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালনকারী মোহাম্মদ শাহেদ সবুর আমাদের সময়কে বলেন, কিছু পণ্য মাত্র একক দেশে রপ্তানি করা হয়। সুদান সরকার নিজেই এ দেশের পাটপণ্য কেনে। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের উৎপাদন বন্ধ নেই। এ কারণে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার পণ্য অবিক্রীত রয়ে গেছে। এসব পণ্য রপ্তানির জন্য বিকল্প বাজার খুঁজছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিকল্প বাজার খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু বাজার পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। কারণ পৃথিবীর বহু দেশে যেমন ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আছে। ফলে এসব দেশে সহজে পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। কারণ এসব দেশে এলসির মাধ্যমে লেনদেন করতে রাজি নয় ব্যাংকগুলো।
একই প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে বিজেএমসির বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাসিম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।