অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে বস্ত্র খাতের সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। এর ঠিক ২৭ মাস পর ২০১৭ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কারকাজের দোহাই দিয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর কারখানাটি গত ২১ মাসে আর উৎপাদনেই আসেনি। এমনকি এই সময়ের মধ্যে কম্পানি কর্তৃপক্ষের কোনো হদিসই পাচ্ছে না স্টক এক্সচেঞ্জগুলো।
একের পর এক চিঠির জবাব ও শেয়ার ধারণের হালনাগাদ তথ্য না দেওয়া, সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে কারখানায় ঢুকতে না পারার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) লিখিত অভিযোগও দিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাত্র আড়াই বছরের মাথায় একটি কম্পানির এভাবে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ায় তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিনিয়োগকারীরা।
বিকেএমইএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের কালুর ঘাট শিল্প জোনে সাতটি প্লট নিয়ে ২০০৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উৎপাদন শুরু করে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। নিটিং, ডাইং ও প্রিন্টিংসমৃদ্ধ কারখানায় উৎপাদিত টি-শার্ট, পোলো শার্ট, টপস্, স্কার্ট, লেগিংস, শর্টস, বক্সার শর্টস আমেরিকা, কানাডা, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও জার্মানিতে রপ্তানি করা হতো। কম্পানিটি ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি ডিএসই ও সিএসই তালিকাভুক্ত হয় এবং ২১ জানুয়ারি থেকে সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন শুরু করে। এর আগে আইপিও ছেড়ে সাড়ে চার কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১০ টাকা ভিত্তি মূল্য হিসাবে ৪৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। এ সময় ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এএফসি ক্যাপিটাল ও ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড।
সিএসই সূত্র জানায়, তালিকাভুক্তির প্রথম দিনেই গার্মেন্ট খাতের সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ১০ টাকার প্রতিটি শেয়ারের দাম এক লাফে ১২০ শতাংশ বেড়ে ২২ টাকায় উন্নীত হয়েছিল। চার বছরের ব্যবধানে সর্বশেষ গতকাল সোমবার কম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লেনদেন হয়েছে ভিত্তি মূল্যের চেয়ে কম মাত্র চার টাকা ৪০ পয়সায়। তালিকাভুক্তির পর প্রথম বছরে ১২ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার বোনাস হিসেবে বিনিয়োগকারীদের দিয়েছে কম্পানিটি। কিন্তু ২০১৭ সালের মে মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণার পর থেকে আর কোনো বোনাস দেওয়া হয়নি বিনিয়োগকারীদের। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই শেয়ার ধারণের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কাছে পাঠিয়েছে কম্পানি কর্তৃপক্ষ। সেই তথ্য অনুযায়ী, কম্পানির ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ১৬ হাজার শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে ২২.১৪ শতাংশ, ইনস্টিটিউটের কাছে ১৫.৬৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৬২.১৯ শতাংশ শেয়ার। এরপর গত দেড় বছরে কম্পানি থেকে শেয়ারসংক্রান্ত আর কোনো হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়নি।
এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের বোনাস না দেওয়ায় ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর কম্পানিটিকে ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়।
সিএসইর প্রধান রেগুলেরিটি কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ শামসুর রহমান বলেন, ‘আমরা একাধিকবার কম্পানি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। পরে আমাদের একটি টিম সশরীরে কম্পানি পরিদর্শনে গেলে কারখানা তালাবদ্ধ থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে। তাদের উদ্দেশে যতগুলো চিঠি কুরিয়ার করা হয়েছে সবই আবার ফেরত এসেছে। আমরা পুরো বিষয়টি বিএসইসিকে জানিয়েছি।’
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম জাকারিয়া জ্যোতি কারখানা বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কমপ্লায়েন্সের কাজের জন্য কারখানা বন্ধ আছে। অবকাঠামোর কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে।’ তবে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে সে ব্যাপারে তিনি কোনো সময় উল্লেখ করেননি। পুঁজিবাজারে আসার মাত্র আড়াই বছরে কোনো কম্পানি বন্ধ হওয়ার মতো ঘটনায় তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখছেন সিএসইর সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কম্পানি তালিকাভুক্তির সময় পূর্ববর্তী মুনাফার যে তালিকা দেয় সেটা প্রকৃত নাকি শুধু কাগজে-কলমে সেটা যাচাই করা উচিত।