দেশের রফতানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। বাড়তি এ আয়ে বেশি অবদান রেখেছে পোশাক, কৃষিজাত পণ্য এবং হিমায়িত খাদ্য ও মাছ।
রফতানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বুধবার এসব তথ্য তুলে ধরেছে। এতে দেখা যায়, সাত মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার। তার বিপরীতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪১৮ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয়েছে ১৭৮ ডলার, যা শতাংশ হিসাবে ৭ দশমিক ৯১। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময় রফতানি আয় ছিল ২ হাজার ১৩২ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এদিকে একক মাস হিসেবে শুধু জানুয়ারিতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এ মাসে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬২ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে আয় বেশি পাওয়া গেছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এছাড়া গত বছরের এ সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
ইপিবির প্রতিবেদনে তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাত মাসে নিটওয়্যার খাতে রফতানি আয় হয়েছে ১ হাজার ১৪ কোটি ডলার। আর ওভেন খাতে রফতানি আয় এসেছে ১ হাজার ৭ কোটি ডলার। পোশাকের দুই খাতে এসেছে ২ হাজার ২২ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮৭৮ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে, সাত মাসে পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৫১ শতাংশ।
এর বাইরে কৃষিজাত পণ্য খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি ডলার, যার বিপরীতে আয় হয়েছে ৫৮ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয়েছে ৪১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৬১ দশমিক ০৩ শতাংশ।
হিমায়িত খাদ্য ও মাছ খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ডলার। আয় বেশি হয়েছে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
পাট ও পাটজাত পণ্য খাতে সাত মাসে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৫০ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কম হয়েছে ২০ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের সাত মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৬২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রে আয় কম হয়েছে ৩ শতাংশ।
এছাড়া কেমিক্যাল পণ্য খাতে রফতারি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫১ দশমিক ০৩ শতাংশ।
ইপিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববাজারে রফতানি পরিস্থিতি, ভোক্তার চাহিদা এবং রফতানিকারকদের সরবরাহ সক্ষমতা সবসময় একতালে চলে না। ফলে বিভিন্ন খাতে রফতানি আয়ে বিভিন্ন সময় কমবেশি বিচ্যুতি ঘটতে পারে। কিন্তু আমাদের রফতানি খাতে আশার খবর হচ্ছে- দু-একটি খাত ছাড়া বাকি সব রফতানি খাতে আয় বেশি হচ্ছে এবং পণ্যে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। এ প্রবৃদ্ধিই সামনে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
অপরদিকে রফতানিকারকরা বলছেন, রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কোনো কোনো খাতে এখনও আয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। এটিই এখন আশঙ্কার বড় কারণ। এটি ভালো লক্ষণ নয়। কারণ আমাদের ন্যূনতম প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগুলো চলবে না। মনে রাখা দরকার, সামনে ২০২১ সাল নাগাদ সার্বিক রফতানি খাত থেকে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এককভাবে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন তা অর্জন করতে হলে প্রতি মাসেই রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকতে হবে ১১-১২ শতাংশ হারে।