Home Bangla Recent মজুরি আন্দোলনের জেরে ১০ হাজার চাকরিচ্যুতি

মজুরি আন্দোলনের জেরে ১০ হাজার চাকরিচ্যুতি

পোশাক শ্রমিক সংগঠনের দাবি

over unrest

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনের পর প্রায় ১০ হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তৈরি পোশাকশ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, শত শত পোশাক কারখানা বিক্ষোভে যোগ দেওয়ায় শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। এই তালিকায় দেশীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি নামি প্রতিষ্ঠানগুলোও। এ বিষয়টি স্বীকার করলেও তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, চাকরিচ্যুত শ্রমিকের সংখ্যা চার হাজারের কিছু বেশি হতে পারে। সেটা ১০ হাজার নয়। গত বছরের ২৯ নভেম্বর পোশাকশ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা সরকার। এ কাঠামোর কয়েকটি গ্রেডে অসংগতি তুলে ধরে তা প্রত্যাখ্যান করেন শ্রমিকরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই এ নিয়ে তীব্র আন্দোলনে নামেন তারা। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়ে এ আন্দোলন চলে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ আন্দোলনে প্রায় ‘অচল’ হয়ে পড়ে উত্তরা, আশুলিয়া, সাভার, মিরপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। অবশেষে সরকার মজুরি কাঠামো সংশোধন করে। শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘটনায় সে সময় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও  গোপন তালিকা ধরে শুরু করে গ্রেপ্তার অভিযান। পোশাকশ্রমিক সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাও গ্রেপ্তার হন। কয়েকজন নেতাকে গুম করারও অভিযোগ করেন শ্রমিক নেতারা। এরপর আন্দোলনে উসকানি, নেতৃত্ব দেওয়া ও যোগদানের কারণে শুরু হয় শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেটা চার হাজারের কিছু বেশি হতে পারে। আমরা দেখব, সেখানে শ্রম আইনের ব্যত্যয় হয়েছে কি না। শ্রম আইনের ব্যত্যয় হলে আমাদের কাছে অভিযোগ করবে, আমরা ব্যবস্থা নেব। বিক্ষোভের নামে আইন অমান্য করলে, কারখানায় ভাঙচুর বা ফৌজদারি অপরাধ যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়Ñ শাস্তি তাদের পেতেই হবে।’ বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যারা বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেবে। ৩ হাজার ২০০ কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি মাসে একজন করে শ্রমিক চাকরিচ্যুত হলেও সংখ্যাটি অনেক হয়।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস বন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন জানায়, মজুরি কাঠামো বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ পরবর্তী সময়ে শুধু ২৭ কারখানা থেকে অন্তত ৭ হাজার ৫৮০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র বলছে, বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে চাকরিচ্যুত শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি। আর বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন কারখানা থেকে সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জাগোবাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৫ জানুয়ারির পর আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শ্রমিকরা কোনো একক সংগঠনের অধীনে না থাকায় তার সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন বিভিন্ন কারখানা থেকে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির অভিযোগ আসছে।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি কাজী রুহুল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শতাধিক কারখানা থেকে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রতিদিন চাকরিচ্যুত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছেই। ’ তিনি আরও বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস, হা-মীম গ্রুপ, বেস্ট শার্ট, ক্রিয়েটিভ গার্মেন্টস, প্রীতিগ্রুপ, নিপা গার্মেন্টসসহ বহু কারখানার প্রত্যেকটি থেকে ৫০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত বা তারও বেশি শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ফলে শ্রমিকদের উদ্বেগ-আতঙ্ক কমছে না। তিনি আরও বলেন, যেসব শ্রমিকরা স্লোগান দিয়েছে বা আন্দোলনের সময় কাজ বর্জন করেছে, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ও যাদের কোনো রকম শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তারা এখন চাকরি হারাচ্ছে।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, তাদের সংগঠনের হিসাব মতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন কারখানা থেকে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের সংগঠনের সাভার থানা সভাপতিসহ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান মিশু। তিনি আরও বলেন, ‘এসব শ্রমিকদের কেউ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা বেতনভাতা বাড়ানোর জন্য যৌক্তিক আন্দোলন করেছেন মাত্র। ’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রধান বাবুল আখতার বলেন, মজুরিকাঠামো নিয়ে আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে শুধু ২৭ কারখানা থেকে অন্তত ৭ হাজার ৫৮০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এইচঅ্যান্ডএম ও নেক্সটসহ অন্তত তিনটি ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি কারখানাতেও শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।

এদিকে পোশাক কারখানায় চলমান চাকরিচ্যুতিতে সাধারণ শ্রমিকরা আছেন আতঙ্কে। গতকাল শুক্রবার মিরপুরের স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের সুইং অপারেটর আলেয়া (২২) জানান, গত জানুয়ারি মাসে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। এ কারণে যেকোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে এই আতঙ্ক আর শঙ্কায় কাটছে তার দিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে মেয়ে ও মা থাকে। তাগোরে প্রত্যেক মাসে টাকা পাঠাইতে হয়। আর বেতনের টাকায় নিজেরও চলতে হয়। চাকরিটা চলে গেলে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো গতি থাকবে না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here