উৎপাদিত পাটজাত পণ্য বিজেএমসি সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় মহাবিপাকে পড়েছে সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিলস কর্তৃপক্ষ। সময়মতো ডেলিভারির না হওয়ায় নতুন ওয়ার্ডের মালপত্র উৎপাদন করতে হতাশায় রয়েছেন মিলের প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। ৬০ কোটি টাকা প্রায় ২০ হাজার বেল পাটজাত পণ্য গত এক বছরের অধিক সময় ধরে সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিলসে আটকে রয়েছে। এদিকে, ডেলিভারির বিপরীতে অধিক পরিমাণ পাটজাত পণ্য ক্রমাগত জমা পড়ায় গোডাউনগুলোতেও কোনোভাবেই স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অন্যদিকে, মিলের অভ্যন্তরে মেশিনপত্রের পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য স্তূপাকারে বা সাঁটিয়ে রাখাও সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কাও। তার পরও বাধ্য হয়ে মিলের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্য মেশিনপত্রের কাছে স্তূপাকার ও সাঁটিয়ে গত এক বছর ধরে রেখেছে মিল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার ভোরে মিলের অভ্যন্তরে সমাপনী সেকশনের সামনে স্তূপ পাটজাত পণ্যের বেলে শর্টসার্কিট থেকে আগুন ধরে যায় বলে দাবি করে মিল কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ১ হাজার ৩০০ বেল পাটজাত পণ্য অগ্নিকাণ্ডে সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দাবি। ঘটনার পর বিজেএমসির কর্মকর্তারা জাতীয় জুট মিল পরিদর্শন করেন। কিন্তু এক বছরের অধিক সময় ধরে জমাকৃত প্রায় ৬০ কোটি টাকার এসব উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি বিজেএমসির কর্মকর্তারা। আর এ কারণে নতুন করে হতাশায় পড়েছে মিল কর্তৃপক্ষ, সেই সঙ্গে শ্রমিক ও কর্মচারীরাও। তারা দ্রুত উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার বিষয়ে বিজেএমসি এবং পাট মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। অন্যথায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি পুঞ্জীভূত দেনার দায়ে আগের মতো আবারও লে-অফ বা বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় রয়েছেন মিলে কর্মরত সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীরা।
প্রকল্পপ্রধান ডিজিএম আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৬০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য এক বছরের অধিক সময় ধরে সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিলে আটকে থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীর পাশাপাশি আমরাও হতাশা। গত বুধবার অগ্নিকাণ্ডের পর বিজেএমসির কর্মকর্তারা এলেও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি।
বিজেএমসির মার্কেটিং শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. মামুনুর রশিদ সমকালকে বলেন, সারাবিশ্বেই পাটজাত পণ্যের কিছুটা মন্দাভাব চলছে। যে কারণে আমরাও বর্তমানে আশাতীতভাবে রফতানি করতে পারছি না। সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিলসের অবিক্রীত পাটজাত পণ্য সরবরাহ বা বিক্রি করার জন্য আমরাও প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি। পণ্য বিক্রিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও প্রতিষ্ঠানটি আবারও আগের মতো দেনার দায়ে পড়বে- সে আশঙ্কা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।