দেশের বস্ত্র খাতে আগামী পাঁচ বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। গতকাল বস্ত্র খাতের প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিটিএমএ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতিসহ নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ৯-১২ ডিসেম্বর চার দিনব্যাপী ‘দ্য ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট মেশিনারি এক্সিবিশন (ডিটিজি)’ অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে প্রদর্শনীটির ১৬তম সংস্করণ। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় প্রদর্শনীটি যৌথভাবে আয়োজন করছে বিটিএমএ ও হংকংয়ের ইয়র্কারস ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিসেস কোম্পানি লিমিটেড।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট খাতে আমাদের সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধিতে ডিটিজির গুরুত্ব অনেক। এ বছর বিশ্বের ৩৭ দেশের ১ হাজার ২০০টি টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারি প্রস্তুতকারক কোম্পানি অংশগ্রহণ করছে। প্রদর্শনীতে মোট ১১টি হলে ১ হাজার ৬৫০টি বুথ থাকছে। নবনিযুক্ত পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করবেন। প্রদর্শনীটি প্রতিদিন দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রদর্শনীতে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট রফতানি আয় হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল থেকে আয় হয়েছে ৩০ হাজার ৬১০ কোটি ডলার। বর্তমানে টেক্সটাইল খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, যা বাংলাদেশের বেসরকারি পর্যায়ে একক খাতে সর্বোচ্চ।
বিটিএমএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সমিতির নতুন সদস্য হয়েছে ৪৪টি কারখানা। এর মধ্যে ১৯টি স্পিনিং, ২৩টি ফ্যাব্রিকস ও দুটি ডায়িং প্রিন্টিং মিল। তাদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৬ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। যেসব মিলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে, তারা সম্প্রসারণ করেছে।
বিটিএমএ বলেছে, সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট দূরীকরণের লক্ষ্যে এলএনজি আমদানি করেছে। তবে সরকারকে এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, যেন এর সরবরাহ মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং তা একটি গ্রহণযোগ্য সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তা না হলে গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকলেও সুফল মিলবে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বস্ত্র খাতে আগামী পাঁচ বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে যথাযথ অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া এ খাতের প্রসারে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানও নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমদানি নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপসহ সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
বিটিএমএ সভাপতি আরো বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সরকার এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা শুধু প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতের মিলগুলোর জন্য ন্যূনতম ২৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যেসব স্পিনিং মিল স্থানীয় চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সুতা তৈরি করছে, কয়েক মাস ধরে তাদের কয়েকশ কোটি টাকার সুতা অবিক্রীত রয়েছে। অন্যদিকে রফতানিমুখী বিভিন্ন মিলের তুলার মূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে সুতা বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে মিলগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। ওভেন উপখাতের অবস্থা আরো খারাপ। গত দুই বছর বা তার কিছুটা বেশি সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের লক্ষাধিক লুমের মধ্যে ৫০-৬০ হাজার লুম বন্ধ হয়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় ওভেন ডায়িং মিলগুলো তাদের প্রসেসিং ক্যাপাসিটি ৪০ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে।
তৈরি পোশাক ও প্রাইমারি টেক্সটাইল খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে অধিক অবদান রেখে আসছে। অথচ এ দুটি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ সর্বনিম্ন নির্ধারণ করা হয়েছে, এমনটি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত দুই বছরের বেশি সময়ের মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে টেক্সটাইল পণ্যের উৎপাদন মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মিলগুলো তাদের তৈরি সুতা ও কাপড়ের দাম সে অনুপাতে বাড়াতে পারেনি। ফলে মিলগুলোর সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।