বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পোশাক শ্রমিকদের দারিদ্র্য বিমোচনসহ আরো অনেক বিষয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আমাদের উন্নয়নের ধারাকে যেন পেছনে ফেলতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে এবং নিজেদের চেষ্টায় এসবের বিরোধিতা করে শতভাগ সফলতা আনতে হবে।
গতকাল বিকালে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক শ্রমিকদের চিত্তবিনোদনের জন্য আয়োজিত মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী সমাবেশ এবং কনসার্টে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে ও আশুলিয়া থানা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সহযোগিতায় আশুলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, আমি শুনেছি বাইরে থেকে লোকজন এসে আপনাদের (পোশাক শ্রমিক) উসকিয়ে পোশাক শিল্পে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। শ্রমিক না বাঁচলে যেমন কারখানার মালিক বাঁচতে পারবে না, তেমনি মালিক না বাঁচলে শ্রমিকও বাঁচবে না। তাই শ্রমিক ও মালিককে দুইভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মালিক-শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল সফলতা আসবে। আপনারা যদি দক্ষতার সঙ্গে কাজ না করতেন তাহলে এ শিল্পের এত বিকাশ হতো না।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, আজকে রফতানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে গার্মেন্টস সেক্টর থেকে। আপনাদের সমস্য সমাধান না করলে ব্যবসাও ভালো হবে না। তাই শ্রমিকদের সব সমস্যা জেনে আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সানা শামিনুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব এবং শিল্পবান্ধব। এ পর্যন্ত আপনাদের জন্য তিনবার মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই আপনারা শিল্প এলাকায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না করে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আশুলিয়া শিল্প এলাকার রাস্তাগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। এসব রাস্তা দিয়ে শ্রমিকদের অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। আশুলিয়া ব্রিজ থেকে বাইপাইল পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা, মাঝখানে ডিভাইডার, দুই পাশে ড্রেন এবং আট ফুট ফুটপাত করতে মাত্র ২০০ কোটির টাকার প্রয়োজন। যে গার্মেন্টস শিল্পের ২৫ শতাংশই আসে এই আশুলিয়া থেকে। সেই এলাকার শ্রমকিদের সুবিধায় দ্রুত রাস্তাঘাটগুলো মেরামত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শ্রমিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, সরকার আপনাদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে, যা দিতে অনেক মালিকদের কষ্ট হবে। তবু আপনাদের সুবিধায় আমরা তা দেয়ার চেষ্টা করব। আপনাদের দায়িত্ব উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কারখানাগুলোকে টিকিয়ে রাখা। দেশের অর্থনীতিতে আপনাদের ভূমিকা অনেক। আপনারাও দেশের উন্নয়নের অংশীদার। তাই প্রধানমন্ত্রী নিজে আপনাদের কথা চিন্তা করেন। কেন আপনারা মাঝেমধ্যেই অন্যের উসকানিতে কাজ বন্ধ করে রাস্তায় নামেন। কারখানা বন্ধ হলে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হবেন। তাই বিশৃঙ্খলা না করে সুষ্ঠুভাবে কাজ করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শ্রমিকদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, মাদকের কারণে আমরা কেন বিপথে চলে যাব। মাদককে না বলব, জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করব এবং সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না—এ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ রায়হান কবির, ডিআইজি (ক্রাইম) আবু কালাম সিদ্দিক, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় ফোক-সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম, এসআই টুটুলসহ খ্যাতনামা শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।