বাংলাদেশ থেকে নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে ২৮১ দিন সময়সীমার প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় ক্রেতা ও শ্রম অধিকার সংস্থার জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড)। এর আগে প্রাথমিকভাবে কোনো ধরনের সময়সীমা উল্লেখ ছাড়াই অসমাপ্ত কাজ শেষের পর কার্যক্রম গোটানো হবে বলে পরিকল্পনা দিয়েছিল জোটটি। তবে সরকার সময়সীমাভিত্তিক পরিকল্পনা চাওয়ায় অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে ২৮১ দিন সময় লাগবে জানিয়ে নতুন এক ওয়ার্কিং পেপার জমা দিয়েছে অ্যাকর্ড। যদিও খাতসংশ্লিষ্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ মনে করছে, ১৫০ দিনের মধ্যেই এ অসমাপ্ত কাজ শেষ করা সম্ভব।
গত বছরের অক্টোবরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্থান পরিকল্পনা দিয়েছিল অ্যাকর্ড। এতে বাংলাদেশে অসমাপ্ত কার্যক্রম ছয় ধাপে শেষ করার কথা উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী সময়ে অ্যাকর্ডের প্রস্থান পরিকল্পনা নিয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে সরকার। এতে সদস্য করা হয় সরকার, বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ডের প্রতিনিধিদের। ওয়ার্কিং গ্রুপটি এখন পর্যন্ত দুবার সভা করেছে। প্রথম সভায় অ্যাকর্ডের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ১৫০ দিন সময়সীমার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে অ্যাকর্ডের পক্ষে ছয় ধাপে ১ হাজার ৫৬২ কারখানা পরিদর্শনের কাজ শেষ করা সম্ভব বলে মনে করছে বিজিএমইএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভায় অ্যাকর্ডের উপস্থাপিত প্রস্থান পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ১৩টি সুপারিশ দেয়া হয়। এর মধ্যে শুরুতেই সময়সীমা উল্লেখ করে নতুন পরিকল্পনা জমা দেয়ার কথা বলা হয়। এ ধারাবাহিকতায় ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় সভায় অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে সময়সীমা উল্লেখ করে ওয়ার্কিং পেপার জমা দেয়া হয়েছে। সেখানে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নে ২৮১ দিনের সময় প্রস্তাব করেছে অ্যাকর্ড।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, অনেকবার আলোচনার পর অবশেষে অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে সময়সীমা উল্লেখ করে একটি পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়েছে। এটিকে তারা বলছে ওয়ার্কিং পেপার। ট্রানজিশন প্ল্যানের প্রস্তুতি হিসেবে তারা ওয়ার্কিং পেপারকে বিবেচনা করতে বলেছে। অনেকগুলো শর্তও দিয়েছে অ্যাকর্ড। এছাড়া অভিযোগ পদ্ধতি নিয়েও কিছু অমীমাংসিত বিষয় এখনো রয়ে গেছে।
পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশ ও শ্রমনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় জাতীয় পরিদর্শন ব্যবস্থায় দুর্বলতার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। ওই দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি পোশাকের ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংস্থার সমন্বয়ে গঠন করা হয় একাধিক জোট। এরই অন্যতম হলো ইউরোপভিত্তিক জোট অ্যাকর্ড। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকার ও খাতসংশ্লিষ্টরা অ্যাকর্ডের কার্যক্রম মেনে নিতে বাধ্য হয়।
অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের পূর্বঘোষিত মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের জুনে। কিন্তু কারখানা সংস্কারে অনগ্রসরতা, শ্লথতা এবং শ্রম অধিকার, নিরাপত্তা না থাকার কারণ দেখিয়েই মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ঘোষণা করে অ্যাকর্ড। এ মূল্যায়ন কার্যক্রম ও সংস্কারের বিষয় নিয়ে বিক্ষুব্ধ কারখানা কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। এ বিষয়ে আদালতের রায় বর্তমানে এক মাসের জন্য মুলতবি রয়েছে।