Home Bangla Recent কম সুদে ঋণসহ গুচ্ছ প্রণোদনা

কম সুদে ঋণসহ গুচ্ছ প্রণোদনা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের উন্নয়নে নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এতে চামড়াশিল্পের গুণগত মান বাড়িয়ে রপ্তানি বাড়াতে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বেশকিছু প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে ব্র্যান্ডিং করার কথাও বলা হয়েছে এতে। খসড়া নীতিমালাটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মতামত পাওয়ার পর খসড়াটি চূড়ান্ত করে জারি করা হবে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, নীতিমালার মধ্যে আটকে থাকলেই হবে না, এ খাতের উন্নয়নে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশে ২২০টি ট্যানারি শিল্প রয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের পরও এ শিল্পের সংকট কাটেনি। মাত্র ২৫টি ট্যানারি উৎপাদন শুরু করেছে। বাকি ১৫৫টি ট্যানারির উৎপাদন এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি।

খসড়া নীতিমালা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু নীতিমালা প্রণয়ন বা খসড়া তৈরি করলেই এ শিল্পের সংকট কাটবে না। বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করতে দরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন না করলে ওই নীতিমালায় এ খাতের কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, ‘চামড়া খাত খুবই সম্ভাবনাময় বড় শিল্প খাত। এ খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলোও রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি, নীতিমালার সঙ্গে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে এ শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে গবেষণা, প্রশিক্ষণ, মেশিনারি, পরিবেশ সুরক্ষা, অধিকতর পরিচ্ছন্ন উৎপাদন এবং অবকাঠামো বিষয়ক প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। তৈরি পোশাক খাতের মতো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) সম্প্রসারণ করা হবে।

চামড়াশিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রসঙ্গে নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর করা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা হবে। ট্যানারিগুলোর আর্থিক চাহিদা অনুযায়ী অর্থ সরবরাহ করা, বিনিয়োগে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়াসহ মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও এনজিও থেকে অর্থের জোগান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতটির রপ্তানি আরও বাড়াতে তহবিল জোগান দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এতে। প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া, ফুটওয়্যার বা পাদুকা এবং চামড়াজাত পণ্য যেমন-হাতব্যাগ, বেল্ট ও ওয়ালেট ইত্যাদিতে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, পাদুকা রপ্তানিতে ২০১৬ সালে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল অষ্টম ও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ১ শতাংশ। বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশের জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতের মোট রপ্তানি মূল্য ছিল ১২৯ কোটি ডলার যা মোট রপ্তানির ৪ শতাংশ। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা কমে ১০২ কোটি ডলারে নামে। ওই বছর এটি ছিল মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৪ ও ২০১৭ সালের মধ্যে এ খাতের সার্বিক রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশ। উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত চামড়ার মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি রপ্তানি করা হয়। পাদুকার ক্ষেত্রে ৯৩টি বড় পাদুকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত রয়েছে এবং সেগুলো প্রায় ৩৭ কোটি ৮০ লাখ জোড়া জুতো তৈরি করে।

চামড়ার সহজলভ্যতা, উৎকৃষ্ট মান, স্বল্প পারিশ্রমিকে শ্রমিক পাওয়াসহ বিদ্যমান বিভিন্ন সুবিধা থাকার কথা উল্লেখ করে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, এ শিল্পের সার্বিক পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব হলে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার এ খাতটিকে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। গবাদি পশু ব্যবস্থাপনা কৌশল, গবেষণা এবং উন্নয়ন ও পরীক্ষাগার, উন্নত চামড়া পাকাকরণ বা ট্যানিং কৌশল, স্বীকৃতি, শ্রমিকদের দক্ষতার পর্যায়, পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম, কার্যকর লবণ মিশ্রিত বর্জ্য পানি শোধন প্রক্রিয়া, কঠিন বর্জ্যরে জন্য একটি কেন্দ্রীয় জমাকরণ স্থান এবং কঠিন বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার প্ল্যান্ট স্থাপনে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, একটি কার্যকর পানি ও পয়ঃশোধনাগার এবং যাজটমুক্ত পণ্য পরিবহনের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, এ শিল্পের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ও রিকভারি প্রক্রিয়া স্থাপনের জন্য অবকাঠামো উন্নত করা প্রয়োজন।

বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষম উন্নতমানের চামড়াপণ্য উৎপাদন ও ব্যবসাবান্ধব টেকসই পরিবেশ তৈরি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, এ জন্য উন্নত অবকাঠামো তৈরি, আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থান বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা আছে। ট্যানারিশিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় পশুর সুষ্ঠু প্রতিপালন থেকে শুরু করে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, চামড়ায় রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার টেকসই করার বিষয়ে তথ্য দিতে পারে এমন আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত নিরীক্ষকদের পরামর্শ নেওয়ার কথাও নীতিমালায় বলা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here