আদালতের রায়ে অবৈধ বিবেচিত রাজধানীর হাতিরঝিলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
মঙ্গলবার সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বিজিএমইএ ভবনে যান রাজউকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, ‘ভবনটি ভাঙতে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিনামাইট ব্যবহার করে আমরা ভাঙার কাজ করব। সেই অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি চলছে।’
সর্বোচ্চ আদালত ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিলেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। সর্বশেষ আদালতের দেওয়া সাত মাস সময়সীমা গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়।
ওই সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য নিয়ে ১৫ তলা ওই ভবনের সামনে অবস্থান নেন রাজউক কর্মকর্তারা। ভবন ভাঙার আধুনিক সব যন্ত্রপাতিও রয়েছে তাদের সঙ্গে।
রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান বলেন, ‘এই ভবনের বিভিন্ন তলায় ১৯টি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। আমরা আপাতত এসব প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরিয়ে নিতে বলছি। এটা ভবন ভাঙার কাজেরই একটা অংশ। যেহেতু অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান তাদের অনেক মালামাল, সেগুলো সরাতেও কিছুটা সময় লাগবে। এরপর আমরা ভবন ভাঙার কাজ শুরু করব।
অলিউর বলেন, ‘ভবন ভাঙার জন্য আমাদের বুলডোজারসহ অন্যান্য গাড়ি প্রস্তুত। এই ভবনে ব্যাংকসহ অন্যান্য অফিস আছে। ব্যাংকের ভল্টে টাকাসহ অফিসের অন্য মালামাল তারা সরিয়ে নেয়ার কাজ করছে। আমাদের কাছ থেকে তারা দুই ঘণ্টা সময় চেয়ে নিয়েছে। আমরা তাদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় এবং সুযোগ দিয়েছি।’
ভবন ভাঙা শুরুর আগে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ সব ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে রাজউক।
কীভাবে এই ভবন ভাঙা হবে- জানতে চাইলে অলিউর বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাঙা হবে। সেটা ডিনামাইট ব্যবহার বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে হতে পারে।’
এর আগে ঢাকায় বড় ভবন ভাঙার একটি ঘটনাই ঘটেছিল; এক যুগ আগে তেজগাঁওয়ের সেই র্যাংগস টাওয়ার ভাঙার সময় দুর্ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল।
সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার চার দিন পর পদক্ষেপ নেয়ার প্রসঙ্গে রাজউক কর্মকর্তা অলিউর বলেন, ‘মহামান্য হাই কোর্ট ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। কিন্তু মাঝখানে কয়েকদিন বন্ধ ছিল, এরপর কর্মদিবস শুরু হয়েছে, আমরাও আমাদের কাজ শুরু করেছি।’
ভবন ভাঙার কাজ বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, বলেন তিনি।
১৯৯৮ সালে সরকারের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ নিয়ে হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ শুরু করেছিলেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা, যার কাজ শেষ হয় ২০০৭ সালে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না।
কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি দুটি বেসমেন্টসহ ১৬ তলা। বিজিএমইএ ব্যবহার করে চারটি তলা। বাকি জায়গা দুটি ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তবে আইনি জটিলতার কারণে তাদের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ভবনের ওপরের দুই তলা নিয়ে বিলাসবহুল ‘অ্যাপারেল ক্লাব’ করা হয়েছে। সেখানে সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট ও সভাকক্ষ আছে। বড় আকারের একটি মিলনায়তনও আছে।