Home Bangla Recent বেশি দামে পোশাক কিনতে বৈশ্বিক ব্রান্ডগুলোর প্রতি আহ্বান

বেশি দামে পোশাক কিনতে বৈশ্বিক ব্রান্ডগুলোর প্রতি আহ্বান

বৈশ্বিক ব্রান্ডগুলোর অসহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকেরা কম মজুরি ও শোষণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন শ্রমিক নেতারা। একই কারণে পোশাক কারখানাগুলো নিরাপদ ও কর্মবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ছয় পূর্তিতে বুধবার শ্রমিক নেতারা এ কথা বলেন।

২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারে পোশাক তৈরির কারখানা রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে ১১ শ র বেশি শ্রমিক নিহত হন। এরপর দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্ম পরিবেশের নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক ব্যান্ডগুলোর চাপ আসে।

এটা সত্ত্বে কম দামে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফ্যাশন কোম্পানিগুলোকে পোশাক তৈরি করে দিতে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর ওপর চাপ অব্যাহত থাকে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) একটি প্রতিবেদনে বলছে, এই অব্যাহত চাপের কারণে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ও নিরাপত্তার খাতের ব্যয় সংকুচিত হচ্ছে। সে সঙ্গে শ্রমিকেরা যথাযথ ব্যবহার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর, পোশাক কারখানাগুলোর পরিবেশ উন্নয়নে দুটি সমঝোতার বিষয়ে জানা যায়। যেখানে খুচরা বিক্রেতারা যুক্ত হয়। এর একটি হলো আগুন ও ভবন নিরাপত্তা বিষয়ক—যেখানে প্রধান প্রধান দুই শ ব্রান্ড ও ইউনিয়নের সাক্ষর ছিল। অন্যটা ছিল কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঠিত জোট।

তবে এখন পর্যন্ত দেশের অনেক পোশাক কারখানার মালিক বলছেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য তারা যে ব্যয় করেছেন, ব্রান্ডগুলো তা দিচ্ছে না। এ বিষয়ে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, তাঁরা নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ করেছেন কিন্তু পোশাকের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, রানা প্লাজার ঘটনার পরে ক্রেতারা ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুবিধা লুটে না নিয়ে বরং একটু উদার হয়ে সাহায্য করতে পারত।

এইচআরডব্লিউ বলছে, বৈশ্বিক পোশাক ব্রান্ডগুলো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোকে কম মূল্য পোশাক সরবরাহ করতে চাপ দিচ্ছে। এতে কারখানাগুলোর মুনাফা প্রান্ত সীমায় নেমে যাচ্ছে। ফলে তারা সময়মতো শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছেন না বা কম মজুরি দিচ্ছেন। একই সঙ্গে বেশি বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে মাত্রাও নির্ধারণ করতে হচ্ছে। এইচআরডব্লিউ আরও বলছে, এতে কারখানাগুলো তাদের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালিয়ে নিতে পারছে না। সংস্থাটি পোশাক তৈরির কারখানাগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সময় বৈশ্বিক ব্রান্ডগুলোকে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাক খাতে কাজ করা শ্রমিকেরা প্রতি ঘণ্টায় ৪৫ সেন্ট মজুরি পায়। তবে রুবানা হক জানাচ্ছেন, এ বছর কারখানাগুলোকে মজুরি পরিশোধে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে কারণ তারা ব্রান্ডগুলো থেকে উপযুক্ত মূল্য পাননি।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাঈদ আহমেদ বলেন, রানা প্লাজা ধসের পরে কারখানাগুলো কর্মীদের নিরাপত্তায় বিশাল বিনিয়োগ করা সত্ত্বেও ব্রান্ডগুলো কম দামে পোশাক কিনছে। তিনি এইচআরডাব্লিউর ওই প্রতিবেদনটি সমর্থন করে বলেন, বিষয়টির একটি টেকসই সমাধান হওয়া উচিত।

শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার বলেন, ব্রান্ডগুলোকে মূল্য বাড়াতে বাধ্য করতে হলে কারখানার মালিকদের এক হতে হবে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রধান কল্পনা বলেন, পোশাকের মূল্য কমাতে মালিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যায়, যা শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, ব্রান্ডগুলোকে কীভাবে ‘না’ বলতে হয় তা সকল দেশের পোশাক কারখানার মালিকদের শিখতে হবে।

অন্যদিকে, ব্রান্ড, সরবরাহ কোম্পানি ও বাণিজ্য জোটগুলোর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করা দ্য এথিক্যাল ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (ইটিআই) বলেছে, তারা সব কোম্পানিকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মজুরি ও তাদের সঙ্গে আচরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘের গাইডলাইন মেনে চলতে উৎসাহিত করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here