গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা যেখানে প্রায় দুই হাজারের মতো শ্রমিক আছে। নাম প্রকাশ না করে কারখানার মালিক বলছিলেন, কাজের পরিবেশ নিরাপদ করার জন্য এই কারখানায় প্রায় সাত কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশি ক্রেতাদের চাপে পড়ে তিনি এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন।
বিভিন্ন কারখানার কয়েকজন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যারা কারখানা নিরাপদ করার জন্য টাকা ব্যয় করেছেন, তারা সেটি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও বিনিয়োগ করেছেন।
ফলে পোশাক রফতানির অর্ডার পাওয়ার জন্য কারখানাগুলোর মধ্যেও চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। এ জন্য দাম বাড়ানোর কথা চিন্তাই করছেন না বিদেশি ক্রেতারা।
বলছিলেন, একটি গার্মেন্টস কারখানার মালিক আরশাদ জামাল। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি কারখানাগুলোর অনেকেই ‘কমপ্লায়েন্স রাডারের’ বাইরে। প্রায় দুই- আড়াই হাজার ফ্যাক্টরি রয়েছে তারাও করছে।
জামাল প্রশ্ন তোলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশেই যদি আরেকটি প্রতিষ্ঠান কম অফার করে, তাহলে বায়াররা (ক্রেতারা) কেন স্বপ্রণোদিত হয়ে দাম বাড়াতে যাবে?‘
পোশাকের দাম আসলে বেড়েছে নাকি বাড়েনি সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। বিদেশি ক্রেতারা এ বিষয়ে যেমন তথ্য দিনে নারাজ তেমনি বাংলাদেশি মালিকরা যে তথ্য দিচ্ছেন সেটি যাচাই করার সুযোগও কম।
তবে বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গার্মেন্টস পণ্যের রফতানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। দাম না বাড়লেও রফতানি বাড়ছে কেন?
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিশ্ববাজারে সাধারণ মানুষ যে ধরণের কাপড় পরিধান করে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প সে ধরণের কাপড় বেশি রফতানি করে।
ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। সে জন্য রফতানির আকারও বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, দাম দিয়ে নয়, বেশি রফতানি করে সেটি পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মালিকরাও বলছেন, চীন এবং ভিয়েতনাম থেকে কিছু অর্ডার এখন বাংলাদেশে আসছে। কারণ ভিয়েতনামে মজুরী বৃদ্ধির কারণে পোশাকের দামও বেড়েছে।
একদিকে কারাখানা নিরাপদ করার জন্য টাকা খরচ এবং অন্যদিকে তৈরি পোশাকের দাম না বাড়লেও তাতে মালিকরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটি মনে করেন না শ্রমিক পক্ষ।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘মালিকরা এ কথাটা সব সময় একটা প্রোপাগান্ডা হিসেবে রাখে যে আমাদের অর্ডার চলে গেল, আমাদের ফ্যাক্টরি ধস হয়ে গেল। শ্রমিকের মজুরি কম দেওয়ার জন্য, শ্রমিকদের আরও ঠকানোর জন্য তারা এ ধরণের প্রোপাগান্ডা সব সময় চালায়।‘
২০১৮ সালে তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩২ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৪ সালে এই আয় ছিল ২৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যাই হোক না, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা খুব একটা কঠিন হবে না।