Home Bangla Recent যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি জুতার সুদিন

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি জুতার সুদিন

বাজারটিতে ৪ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের জুতা রপ্তানি দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে অ্যাপেক্স, বে, লেদারেক্স ফুটওয়্যারসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান জুতা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত

তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশে তৈরি জুতারও বড় বাজার এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র। বাজারটিতে দীর্ঘদিন ধরে তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি করে আসছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। আর কয়েক বছর ধরে জুতা রপ্তানিতেও ভালো করছেন এ দেশের রপ্তানিকারকেরা। ফলে চার বছরের ব্যবধানে দেশটিতে জুতা রপ্তানি দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৬ কোটি ১৪ লাখ ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছিল। গত বছর সেই রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা হয়েছে। রপ্তানির এই পরিমাণ ২০১৭ সালের চেয়ে ১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি।

রপ্তানিকারকেরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্র্যান্ড ভিয়েতনাম থেকে জুতা কেনে। তবে সেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই কিছু ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে জুতা কিনতে বাড়তি ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। সে জন্যই বাজারটিতে রপ্তানি বাড়ছে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য বাজারেও বাংলাদেশের জুতা রপ্তানি বাড়ছে। গত অর্থবছরে সাড়ে ৫৬ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছিল। সে সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সেই প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত অর্থবছরে ২৪ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়।

অ্যাপেক্স, বে, লেদারেক্স ফুটওয়্যারসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান জুতা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের জুতা রপ্তানির ৬০-৬৫ শতাংশের বেশি যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। তারপরই ১৭-১৮ শতাংশ জুতা রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। জাপানে রপ্তানি হয় ৬-৭ শতাংশ জুতা।

জানতে চাইলে বে ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো ব্যবসা করছে টিম্বারল্যান্ড। আমরা এই ব্র্যান্ডটির জন্য জুতা তৈরি করছি। সে জন্য আমাদের রপ্তানি বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিখ্যাত ব্র্যান্ড ভিএফ করপোরেশনের সোর্সিং বিভাগের প্রেসিডেন্ট তিন সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি বিভিন্ন পোশাক কারখানার সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি আমাদের সঙ্গেও বসেছিলেন। বাংলাদেশ থেকে জুতা ক্রয়ে ব্র্যান্ডটি বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে।’

বাংলাদেশের জুতা রপ্তানি বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের আকার অনুযায়ী সেটি খুবই নগণ্য। কারণ, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৬২২ কোটি ডলারের ২৪৪ কোটি জোড়া জুতা আমদানি করেছে। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ১ হাজার ৩৮৯ কোটি ডলারের ১৬৯ কোটি জোড়া জুতা চীন থেকে রপ্তানি হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানি হয়েছে ৬১৬ কোটি ডলারের ৪৬ কোটি জোড়া জুতা এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ১৫৪ কোটি ডলারের ১০ কোটি জোড়া জুতা রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে গেছে ৫১ লাখ জোড়া জুতা। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৯ লাখ ৬১ জুতা জোড়া রপ্তানি হয়েছে।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যান্ডগুলো চামড়াবিহীন জুতা আমদানি বাড়াচ্ছে। গত বছর তাদের আমদানি করা জুতার মধ্যে ৪০ শতাংশ চামড়ার তৈরি এবং বাকি ৬০ শতাংশ ছিল চামড়াবিহীন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। গত বছর মাত্র ৮ লাখ জোড়া চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএলএফইএ) সাবেক সভাপতি এম আবু তাহের বলেন, ‘চামড়ার জুতার দাম বেশি হওয়ায় সারা বিশ্বের ভোক্তারা চামড়াবিহীন জুতার দিকে ঝুঁকছে। তবে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে আমাদের অনেক কারখানাই প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বাড়াতে হলে সরকারের সহযোগিতা দরকার।’

আবু তাহের আরও বলেন, চামড়ার জুতা রপ্তানিকারকেরা ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা পান। কিন্তু চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে কোনো নগদ সহায়তা নেই। জুতা রপ্তানি বাড়াতে হলে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা দিতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে জুতা রপ্তানিতে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে সোর্সিং বাড়িয়েছে। তারা আগের চেয়ে বেশি অর্ডার দিচ্ছে। সেসব ব্র্যান্ডের জন্য জুতা উৎপাদনের কারণে এ দেশের রপ্তানি বেড়েছে। তবে বাংলাদেশের জুতার বড় বাজার ইইউতে কিছুটা মন্দাভাব আছে। তাই সামগ্রিকভাবে জুতা রপ্তানি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি।’

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, চামড়া খাতের বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) অনুমোদিত ট্যানারি ছাড়া অন্য কোনো ট্যানারি থেকে চামড়া কেনে না বড় ব্র্যান্ডগুলো। বাংলাদেশে সেই মানের ট্যানারি আছে একটি, সেটি অ্যাপেক্স ট্যানারি। তাই আমদানি করা চামড়ার ওপর অধিকাংশ জুতা রপ্তানিকারককে নির্ভর করতে হচ্ছে। জুতা রপ্তানিতে মূল্য সংযোজনও কমে গেছে। তাই এলডব্লিউজির অনুমোদনের জন্য সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরের মান উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ দরকার এবং সেটি খুব দ্রুত করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here