দেশের চামড়া শিল্পে রফতানি আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। এর জন্য চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানার দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিম্নমানের কর্মপরিবেশকেই দুষছেন এ শিল্প সংশ্লিষ্টরা।তারা বলছেন, চামড়া শিল্পনগরে পরিবেশ দূষণ বন্ধ না হলে এবং বৈশ্বিক সংগঠন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের মানসনদ অর্জিত না হলে চামড়া শিল্প বড় ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ পাবে না। রফতানি বৃদ্ধিতে সার্বিকভাবে কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রয়োজন।
গতকাল চামড়া শিল্প নিয়ে এশিয়া ফাউন্ডেশন ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) এক সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে ডেইলি স্টার ভবনে এ আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও এপেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারপারসন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ, ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রমুখ।
সমীক্ষায় বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার রফতানি আয় হয়েছিল। পরের বছর তা কমে ১০৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নামে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে চামড়া খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৭৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ কম।
সাভারে চামড়া শিল্পনগরের নাজুক পরিস্থিতির একটি চিত্রও তুলে ধরা হয় সমীক্ষায়। এতে বলা হয়, ট্যানারিতে উৎপাদিত বর্জ্য এখনো পূর্ণমান অনুযায়ী পরিশোধন করা যাচ্ছে না। কঠিন বর্জ্য খোলা আকাশের নিচে ডাম্পিং ইয়ার্ডের জন্য নির্ধারিত স্থানে ফেলা হচ্ছে। জায়গাটি চলতি বছরের মধ্যেই পূর্ণ হয়ে যাবে।
সমীক্ষাটি যৌথভাবে তুলে ধরেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ও ড. আবু ইউসুফ। চামড়া খাতের এই পতনোন্মুখ পরিস্থতি থেকে উত্তরণের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু ইউসুফ বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল নো কমপ্লায়েন্স নো বিজনেস। চামড়া খাতের কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হতেই হবে। এর দুটি দিক—একটি কর্মপরিবেশ, অন্যটি সামাজিক কমপ্লায়েন্স। কমপ্লায়েন্সের উন্নতি না হলে রফতানি সম্প্রসারণ হবে না। চামড়া খাতের আন্তর্জাতিক সংগঠন এলডব্লিউজির একজন নিরীক্ষক সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি কিছু সুপারিশ দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, চামড়া খাতের জন্য প্রথম কাজ হওয়া উচিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) কার্যকর করা। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো কর্মপরিবেশ ও সামাজিক কমপ্লায়েন্সের উন্নতি।
কমপ্লায়েন্সের ব্যাপারে একমত পোষণ করে চামড়াজাত পণ্য রফতানিকারকদের সংগঠন এলএফএমইএবি সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম বলেন, এলডব্লিউজির মান অনুযায়ী পরিবেশ সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে পারলে ২০২১ সালে চামড়া খাতে রফতানি কমপক্ষে ২৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।