Home Bangla Recent বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের উদ্যোগ : পাটকল শ্রমিকদের জন্য ১৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ

বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের উদ্যোগ : পাটকল শ্রমিকদের জন্য ১৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ

jute mills

আপত্কালীন জরুরি বিবেচনা ও আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার থোক বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বকেয়া মজুরি ও উৎসব ভাতা হিসেবে শ্রমিকদের পাওনা এ অর্থ সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। গতকালই এ অর্থ বরাদ্দের কথা জানিয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

পাটকল শ্রমিকদের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, আপত্কালীন জরুরি বিবেচনা ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি ও উৎসব ভাতা পরিশোধের জন্য এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘদিন ধরেই বকেয়া বেতন, মজুরি ও উৎসব ভাতার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করে আসছিলেন পাটকল শ্রমিকরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বকেয়া বেতন-মজুরি ও উৎসব ভাতা পরিশোধের জন্য এ অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বরাদ্দ দেয়া অর্থ শুধু পাটকল শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি ও উৎসব ভাতা হিসেবে পরিশোধে ব্যবহার করা যাবে বলে চিঠিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পাট) প্রদীপ কুমার সাহা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বিজেএমসির কারখানাগুলোর জন্য যে খাতে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা এর বাইরে অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। এছাড়া সুনির্দিষ্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

চিঠিতে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর জন্য ছয় দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনায় বলা হয়, বরাদ্দ দেয়া অর্থ ব্যয়ের সাতদিনের মধ্যে মিলভিত্তিক শ্রমিকের তালিকাসহ বিস্তারিত বিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। বরাদ্দ দেয়া অর্থ ব্যয়ে সরকারি বিধিবিধান মানতে হবে। এর অন্যথা ঘটলে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বিজেএমসি ও অর্থ বিভাগের মধ্যে স্বাক্ষরিত শর্তগুলো পরিপালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চিঠিতে।

জানা গেছে, থোক বরাদ্দের এ অর্থকে পরিচালন ঋণ হিসেবে গণ্য করা হবে। ৫ শতাংশ সুদে ছয় মাসের কিস্তিতে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। কিস্তিতে এ অর্থ পরিশোধের সময়সীমা ২০ বছর। এজন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে বিজেএমসিকে একটি ঋণ চুক্তি করতে হবে। লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকার এতদিন বিজেএমসির হাতে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা তুলে দিতে ভরসা পায়নি। মূলত এ কারণেই বেতন-ভাতার অর্থ সরাসরি শ্রমিকদের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

প্রসঙ্গত, বকেয়া মজুরি ও বেতন পরিশোধসহ নয় দফা দাবিতে শ্রমিকরা গত ১৩ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এ নয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫-এর সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া টাকা প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ দান ও তা স্থায়ীকরণ, মৌসুমের সময় পাট কিনতে অর্থ বরাদ্দ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া মজুরি ও বেতন প্রদান এবং ১৮ মের মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা হবে বলে গত ৭ এপ্রিল বিজেএমসির পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এরপর শ্রমিকরা অবরোধ ও কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে যোগ দেন। গত ২৫ এপ্রিল এ নিয়ে আরো এক সপ্তাহ সময় নেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মজুরি না পাওয়ায় ৫ মে থেকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। সারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোয় একযোগে এ কর্মসূচি পালন শুরু হয় ১৩ মে। এর পরবর্তী সময়ে ১৯ মে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। সে সময় ২২ মে থেকে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন পাটকল শ্রমিকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here