২০২০-এর দশকটি হতে যাচ্ছে এশীয়দের। এ সময় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় মহাদেশটির আধিপত্য থাকবে একচেটিয়া। দেশগুলোর মাথাপিছু আয়েও দেখা যাবে ব্যাপক উল্লম্ফন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের গবেষণা বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয়ে ভারতকে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ। তবে এর চেয়েও বেশি এগোবে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। মাথাপিছু আয়ে এশিয়ার এ দুই দেশের পেছনেই থাকবে বাংলাদেশ।
যেসব দেশ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে বলে ধারণা করা হয়, সেসব দেশের অর্থনীতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে আসছে লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এর ভিত্তিতে গত রোববার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ফিলিপাইন এ সময় ৭ শতাংশের বেঞ্চমার্ক অর্জন করতে পারে। এ তালিকায় ঠাঁই পেতে পারে ইথিওপিয়া ও আইভরিকোস্টের মতো আফ্রিকার দেশও। এ প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখার সাধারণ অর্থ হলো, প্রতি ১০ বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়ে দ্বিগুণ হওয়া।
এ সময় দেশগুলোর মাথাপিছু আয়েও দেখা যাবে বড় অগ্রগতি। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৭০০ ডলার। এ আয় ভারতের মাথাপিছু আয়কেও ছাড়িয়ে যাবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ভারতের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪০০ ডলার। যদিও মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি উল্লম্ফন হবে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের। ২০৩০ সাল নাগাদ ভিয়েতনামের মাথাপিছু আয় বেড়ে হবে ১০ হাজার ৪০০ ডলার। আর ফিলিপাইনে এ আয় দাঁড়াবে ৬ হাজার ৯০০ ডলারে।
৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ক্লাবের অন্য তিন সদস্যের মধ্যে আইভরিকোস্টের মাথাপিছু আয় ২০৩০ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়াবে ৪ হাজার ৪০০ ডলার। সে সময় নাগাদ আফ্রিকার আরেক দেশ ইথিওপিয়ার মাথাপিছু আয় হবে ২ হাজার ৮০০ ডলার। এছাড়া ৪ হাজার ৮০০ ডলার মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড মনে করছে, এ তালিকার দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জিডিপি দাঁড়াবে লক্ষণীয় অবস্থানে। এর কারণ হলো ২০৩০ সালে এসব দেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে বৈশ্বিক জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশে। এক্ষেত্রে ভারতের জন্য আশীর্বাদ হতে যাচ্ছে দেশটির জনতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ।
২০১০ সাল থেকেই এ তালিকায় এশীয় আধিপত্যের বিষয়টিতে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ওই সময়ের পর থেকেই যেসব দেশ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে বলে ধারণা করা হয়, সেসব দেশের অর্থনীতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে আসছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। ওই সময়ে উভয় মহাদেশের সমানসংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত তালিকার অন্তর্ভুক্ত দেশ ১০টি ছিল—চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, উগান্ডা ও মোজাম্বিক।
সর্বশেষ তালিকায় চার দশক ধরে এ ক্লাবের নিয়মিত সদস্য চীনের অনুপস্থিতির বিষয়টি লক্ষণীয়। এ অনুপস্থিতির কারণ হলো শ্লথ প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মাথাপিছু আয়ের দিকে এমন এক অগ্রযাত্রা, যার ফলে প্রবৃদ্ধির টেকসই গতি ধরে রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রক্ষেপণ বলছে, ২০২০-এর দশকে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি।
তালিকা থেকে হারিয়ে গেছে আফ্রিকার সাব-সাহারান দেশগুলোও। পণ্যবাজারের মূল্য পরিস্থিতিতে মন্দাভাব থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সংস্কারের গতি হারানোকেই এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ভারতভিত্তিক থিমেটিক রিসার্চের প্রধান মধুর ঝা ও গ্লোবাল চিফ ইকোনমিস্ট ডেভিড মানের মতে, তার মানে এই নয় যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্রুতগতিকে সর্বব্যাধির মহৌষধ বলা চলে। এক্ষেত্রে যেমন অনেক ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়, তেমনি এর পাশাপাশি আয়বৈষম্য, অপরাধপ্রবণতা ও দূষণের মতো বিষয়গুলোও বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
প্রতিবেদনে এ দুই বিশ্লেষক বলেন, দ্রুত প্রবৃদ্ধি শুধু মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনে না, একই সঙ্গে তা নিয়ে আসে ভালো স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থাও। নিয়ে আসে পণ্য ও সেবায় আরো ব্যাপক ও বাড়তি প্রবেশাধিকারও। উচ্চপ্রবৃদ্ধিসৃষ্ট বাড়তি আয়ের কারণে সাধারণত সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মাত্রা বেশ হ্রাস পায়। একই সঙ্গে তা সুগম করে তোলে কাঠামোগত সংস্কারের পথকেও।
এছাড়া ৭ শতাংশ ক্লাবের সদস্য দেশগুলোয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হার মোট জিডিপির ২০-২৫ শতাংশ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।