রপ্তানির আয়ের প্রধান উৎস দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। বেতন-বোনাস দিতে না পারা, রপ্তানি আদেশ না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত বন্ধ হচ্ছে একের পর এক পোশাক কারখানা। গত ১৮ দিনে বন্ধ হয়েছে ২২টি। খুব শিগগির বন্ধ হবে আরও ৩০টি। এদিকে পোশাকশিল্পের সংকট কাটাতে সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ ছাড়া রুগ্ণ শিল্পগুলো যেন এককালীন পদ্ধতিতে ঋণ পরিশোধ করে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারে, সে সুবিধাও চাওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, একসময়ের ভালো কারখানাগুলো এখন বন্ধের উপক্রম। তারা অনৈতিকভাবে এক সময় দেদার ব্যবসা করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দ্বারা কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ওইসব কারখানা এখন বেকায়দায় পড়েছে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে কোনো রকমে কারখানার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে। তবে এ ধরনের কারখানা খুঁজে বের করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিজিএমইএ। সম্প্রতি একটি কারখানার মালিককে ৩ দিন আটকে রেখে ওই কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিলে দেশের রপ্তানি বেড়েছে মাত্র আড়াই শতাংশের মতো। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগই আসে পোশাক খাত থেকে। এতে বোঝা যায় পোশাক খাতের আয়ের চিত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে পোশাক কারখানোর সংখ্যা ৪ হাজার ৫৬০। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আয়-ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাই কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ। একদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে কমছে পোশাকের দর। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে কমছে পোশাকের চাহিদা। এর মধ্যে সংস্কারের জন্য অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আবার এ কারখানাগুলোয় রপ্তানি আদেশও আগের তুলনায় কম। এ কারণে ছোট-মাঝারি মানের কারখানাই বেশি বন্ধ হয়েছে। বিজিএমএই সভাপতি রুবানা হক বলেন, কারখানা চালাতে হলে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে। যাদের ব্যবসা নেই তারা কারখানা বন্ধ করে দেবেন। শ্রমিকদের অভুক্ত রাখা যাবে না। শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রেখে ব্যবসা করা যায় না। এ জন্য অক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা বন্ধের পদক্ষেপ নেব। মালিকরা জানান, প্রতিযোগী বিভিন্ন দেশ এই খাতকে নগদ সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, পোশাক খাতের উন্নতির জন্য আমরা সরকারের কাছে ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা চেয়েছিলাম। এতে সরকারের খরচ হবে ১৪ হাজার কোটি টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই খাত থেকে এত বেশি রাজস্ব আদায় হয় না, তা হলে এত টাকা কীভাবে দেওয়া যাবে? এ ছাড়া রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের কোনো নীতি নেই। দেউলিয়া ঘোষণা করে তারা যেন ব্যাংকের ঋণ থেকে মুক্তি পেয়ে ব্যবস্য বন্ধ করতে পারে, সেই নীতি তৈরি করতে হবে।