ভারতকে দেওয়া বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস-জিএসপি) যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করায় বাংলাদেশ বিষয়টিকে সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে। দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এরফলে ভারত যে পরিমাণ তৈরি পোশাকের অর্ডার হারাবে, বাংলাদেশ ঠিক ততটুকু পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ভারতের জিএসপি সুবিধা বাতিল হওয়ায় আমাদের উপকার নিশ্চয়ই হবে। এতে আমাদের তৈরি পোশাকের অর্ডার বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলো। তবে কী পরিমাণ অর্ডার বাড়বে, সেটা বলা মুশকিল। রুবানা হক আরও বলেন, আমরা যদি ভারতের হারানো অর্ডারটা নিয়ে আসতে পারি, তবেই সার্থকতা। আর যদি না পারি, তাহলে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম বা অন্য যে কোনও দেশে অর্ডারটা চলে যেতে পারে। তবে ভারতের হারানো অর্ডারটা আমাদের কাছেই আসবে এর কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বায়াররা যদি সিদ্ধান্ত নেন, তারা বেশি দাম দিয়ে ভারত থেকে পোশাক কিনবেন, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।
ভারত এতদিন তৈরি পোশাকসহ দুই হাজাপর পণ্য জিএসপি সুবিধা পেতো উল্লেখ করে রুবানা হক বলেন, ভারত ৫৭০ কোটি ডলারের পণ্যে জিএসপি সুবিধা পেতো। এরমধ্যে কতটুকু তৈরি পোশাক ছিল, তা আমরা কেউ জানি না। তবে, ভারতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, জিএসপি সুবিধা বাতিল হওয়ায় তাদের ১০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হবে না।
এদিকে, ভারতকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করায় বাংলাদেশের বাণিজ্যের খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ভারতের জিএসপি সুবিধা যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করায় বাংলাদেশের অতি সামান্য কিছু লাভ হলেও হতে পারে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশকে আগের মতো জিএসপি সুবিধা দিতো, তাহলে বেশি লাভ হতো। তিনি আরও বলেন, জিএসপি সুবিধা বাতিল করার কারণে ভারতের হারানো অর্ডার যদি বাংলাদেশে আসে, তাহলে উপকার হবে। কিন্ত আমাদেরও জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। ফলে তৈরি পোশাকে কোনও উপকারিতা পাবে না বাংলাদেশ। অবশ্য ‘নন গার্মেন্টস’ পণ্য রফতানিতে কিছুটা উপকার হলেও হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শুক্রবার ভারতের জিএসপি সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দেন। আগামী বুধবার থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হওয়ার কথা। জিএসপি বাতিলের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ‘গ্রহণযোগ্য’ প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি দেশটি। যে কারণে, ভারতকে দেওয়া বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো বলেও তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে জিএসপি প্রকল্প চালু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রকল্পের আওতায়, উন্নয়নশীল দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্য রফতানি করতে পারে। জিএসপির সুবিধার আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারত প্রায় ছয় শ’ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি করতে পারতো। এরআগে ভারতীয় স্টিলের ওপর শতকরা ২৫ ভাগ ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।